অপরিশোধিত, পরিশোধিত তেল কিনতে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় ঢাকা

বাংলাদেশে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল রপ্তানির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি। সেইসঙ্গে, দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের অবকাঠামো আধুনিকায়ন করার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বুধবার (২৪ আগস্ট) ঢাকার রুশ দূতাবাস ও স্পুটনিক নিউজ এজেন্সি অ্যান্ড রেডিও-এর যৌথ সহযোগিতায় আয়োজিত 'সিক্স মান্থস অফ দ্য স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন ইন ইউক্রেন: ইটস রেজাল্টস অ্যান্ড পার্সপেক্টিভ। রাশিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনস ইন দ্য কন্টেক্সট অফ ইকোনমিক ক্রাইসিস' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকার রুশ দূতাবাসে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ওয়াশিংটন ও তার মিত্রদের চক্রান্ত জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ-রাশিয়ার ফলপ্রসূ সহযোগিতাকে নষ্ট করতে পারেনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বিনা বাধায় এবং শিডিউল অনুযায়ী চলছে।
সম্প্রতি, গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টস বিভি ভোলা দ্বীপের গ্যাসক্ষেত্রে একটি নতুন কূপ খনন কাজ শুরু করেছে। চলতি বছরে আরও দুটি কূপ অনুসন্ধানের কাজ শুরু হবে, এমন আশা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"এই উদ্যোগ বাংলাদেশের নিজস্ব খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুসংহত করতে অবদান রাখবে," যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।
গম কেনার ক্ষেত্রেও সরাসরি পর্যায়ে জি-টু-জি ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে বাংলাদেশের। প্রাথমিক পর্যায়ে রাশিয়া থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টন গম সরবরাহের সম্ভাবনার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশে পটাশ সার সরবরাহ করতেও রাশিয়া প্রস্তুত বলে জানান রাষ্ট্রদূত। কারণ অজৈব সার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর এখন আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নেই।
এছাড়া, বাংলাদেশি ওষুধ ও কৃষিপণ্য ক্রয়ের জন্য রাশিয়ার আগ্রহ বাড়ছে। মার্চে বাংলাদেশ থেকে আলু সরবরাহের ওপর রাশিয়ার ফাইটোস্যানিটারি কর্তৃপক্ষ যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে আমের প্রথম লট রাশিয়া পৌঁছেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
অধিকন্তু, করেসপন্ডেন্ট বা বার্তাপ্রেরণ সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সবসময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া বিশ্ব বাণিজ্যের দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে কৃষি পণ্য, সার, তেল, তেলজাত পণ্য এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল বাধ্যবাধকতা পালন করতে চায়।
"আমরা সম্ভাব্য খাদ্য সংকট নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন; বাংলাদেশ ও এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে সচেতন," বলেন রাষ্ট্রদূত।
এই লক্ষ্যে, রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনীয় শস্যের অবাধ রপ্তানি নিশ্চিত করতে সম্মত হয়েছে। তবে এই চুক্তির ব্যবহারিক বাস্তবায়নের ফলে দেখা যায়, এতে মূলত ইউক্রেন থেকে ইউরোপে পণ্য পৌঁছেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নয়। অথচ এই দেশগুলোতেই পণ্যের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, উল্লেখ করেন তিনি।
বৈশ্বিক খাদ্য, জ্বালানি এবং আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা কেবল পরিবহন এবং অন্যান্য লজিস্টিক্যাল বাধা কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। আর এটি অর্জনের একমাত্র উপায় হলো, পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা আরোপিত সমস্ত একতরফা ও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ উঠিয়ে নেওয়া।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশসহ বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তার জন্য রাশিয়া নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দায়ী।
"সুতরাং আমাদের দোষারোপ করবেন না," যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন একমেরু বিশ্ব এখন রাশিয়া, চীন, ভারত এবং অন্যান্য দেশের নেতৃত্বে বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
রুশ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংলাপের জায়গাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেনো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক উত্তেজনা কমাতে এবং সংঘাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই সংস্থাগুলোর অবশ্যই নির্ভরযোগ্য উপায়ে নিরাপত্তা এবং সমস্ত দেশ ও জনগণের মঙ্গল নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা উচিত বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।