বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ কর্মী নিতে চায় কাতার
স্বাস্থ্যসেবা, হসপিটালিটি, ড্রাইভিং, নির্মাণ এবং আইটি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও স্বল্পদক্ষ কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কাতার। উপসাগরীয় দেশটি সম্প্রতি বিভিন্নখাতে দক্ষ জনবলের ঘাটতির মুখোমুখি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
রোববার (২১ আগস্ট) ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশ সফররত কাতারের শ্রমমন্ত্রী আলি বিন সাঈদ বিন আল সামিক আল মারি এ কথা জানান।
শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসী শ্রমিক-কর্মীদের যথাযথ অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আরব দেশ কাতার।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মোঃ শহিদুল আলম টিবিএসকে বলেন, "বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারে অনেক স্টেডিয়াম, হোটেল, মার্কেট নির্মিত হয়েছে। এছাড়া, সেখানে স্বাস্থ্য ও আইটি খাতেও দক্ষ কর্মী লাগবে।"
গত কয়েক বছরে কাতারে শ্রমিকের সংখ্যা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, "কাতারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক দিতে আমরা বাংলাদেশ-কাতার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেছি।"
তিনি বলেন, কাতারের মন্ত্রী বাংলাদেশি শ্রমিকদের কোনো অধিকার লঙ্ঘিত হলে আন্দোলন না করে আইনগতভাবে সমস্যা মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার উভয় দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রম অধিকার নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএমইটির মহাপরিচালক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কাতারের শ্রমমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে তারা বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ শ্রমিক নিতে চান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের শ্রমমন্ত্রীকে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন।
বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে কাতারে কাজ করছেন।
দেশটি কোভিড পূর্ববর্তী বছরগুলোতে গড়ে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ করেছিল।
বিএমইটি'র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত উপসাগরীয় দেশটি বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার ৩৪৪ জন কর্মী নিয়োগ করেছে; ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ১৫৮।
বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, বেশিরভাগ কর্মী নির্মাণ, ড্রাইভিং এবং পরিচ্ছন্ন খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নেতৃত্বস্থানীয় প্রোফেশনাল সার্ভিস নেটওয়ার্ক পিডব্লিউসি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি কর্মীর ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এরমধ্যে কুয়েত থেকে অংশগ্রহণকারীদের ৭৫ শতাংশ এবং কাতারের ৬০ শতাংশ বলেছেন, তাদের দেশে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন লোকের অভাব রয়েছে।
এদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে আলি বিন সাইদ বিন আল সামিক আল মারি দেশের ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারে উপযুক্ত দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করে কাতারের শ্রমমন্ত্রী বলেন, কাতারের শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনে বিদেশি কর্মীরা স্থানীয় কর্মীদের মতো একই সুবিধা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগকর্তারা বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে অবৈধ কর্মকাণ্ড করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাতারে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। কোনো নিয়োগকর্তা বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে এই তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা হবে বলেও জানানো হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী কাফালা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ বিষয়ে কাতারের ইতিবাচক সংস্কারের প্রশংসা করেন।