বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: চার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
পশ্চিমবঙ্গ-উত্তর উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি ও বাগেরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জেলার সব প্রধান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বরগুনা
মঙ্গলবার থেকে গত ছয় দিন ধরে অবিরাম বর্ষণে জলোচ্ছ্বাসের কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বিষখালী নদীর পানি বরগুনা পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং পাথরঘাটা পয়েন্টে ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়ার বুলেটিনে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সাধারণ জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং সমস্ত মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারকে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
জলোচ্ছ্বাসে যে কোনো সময় বন্যা রক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় দিন পার করছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
বরগুনা সাইক্লোন প্রিপারেশন প্রোগ্রামের (সিপিপি) রেডিও অপারেটর গোলাম মাহমুদ বলেন, বৃষ্টি কত দিন চলবে বলা মুশকিল।
বাগেরহাট
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন। দুবলারচর, করমজল, কটকাসহ সুন্দরবনের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল সংকট তৈরি করেছে।
বাগেরহাট, সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মংলা উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে।
সুন্দরবন পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৩.৫ ফুট ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক হরিণ পুকুরের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে ছুটতে দেখা যায় হরিণগুলোকে।
এছাড়া জেলেরা সুন্দরবনে আশ্রয় নিয়েছে।
এখানে ৫৩টি পুকুর রয়েছে এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে সবগুলো পুকুর পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ। মিষ্টি পানির উৎস হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দুবলারচর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার মজুমদার জানান, গত রবিবার সুন্দরবনের পুকুর ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাগেরহাট জেলার মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, অনেক মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সম্ভাব্য লোকসানের আশঙ্কায় মাছের ঘের মালিকরা।
ঝালকাঠি
ঝালকাঠির বিষখালী ও সুগন্ধা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে জেলার চার উপজেলার ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কয়েক শতাধিক মানুষ অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এবং দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নদীর পানি প্রবেশ করেছে, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ছুটি দিতে বলেছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৪টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদ ভবন, ইউএনও অফিস ও বাসাবাড়িও তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া শৈলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া ঢালী খালের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমুয়া বন্দরের প্রধান বাজারও তলিয়ে গেছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলার ২১টি, সদর উপজেলার আটটি, নলছিটি উপজেলার নয়টি ও রাজাপুর উপজেলার ১১টি গ্রাম জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে গত চার দিনের অবিরাম বর্ষণে জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি উপচে পড়েছে, অনেক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান জানান, রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জোয়ারের কারণে পানি স্বাভাবিক থেকে ২০৪ ফুট ওপরে প্রবাহিত হবে।
বরিশাল নগরীর অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভোলা
ভোলার সদর উপজেলার ২৫টি গ্রাম, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায় গত পাঁচ দিনের জোয়ার ও অবিরাম বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে ২৫-৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন।
গত পাঁচ দিনের জোয়ার ও অবিরাম বর্ষণে ভোলার সদর উপজেলার ২৫টি গ্রাম, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৫-৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে- সদর উপজেলার রাজাপুর, সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, মদনপুর, হাজীপুর, তজুমদ্দিন, দৌলতখান উপজেলার চর জহিরউদ্দিন, ধলচর, চর কুকরি মুকরি, চর ফ্যাশন উপজেলার চর নিজাম, মনপুরা উপজেলার কলাতলী চর এবং ১০টি। জেলার আরও ১২টি চর।
ইতোমধ্যে ভোলা জেলার রাজাপুর গ্রামে ১৯টি ছাগল মারা গেছে।
মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে এবং আমন বীজতলাও তলিয়ে গেছে।
রাজাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভোলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, আবহাওয়া অফিস শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ মিলিমিটার এবং রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ১৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
সোমবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী সচিব আবদুর রহমান জানান, ভোলায় মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।