জন্ডিস আক্রান্ত ময়মনসিংহের সেই অলৌকিক শিশু, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মৃত মায়ের পেট থেকে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতক জন্ডিস আক্রান্ত, তবে তার সার্বিক অবস্থার অবনতি হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে তার চিকিৎসায় ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে নবজাতকের সহায়তার জন্য একটি ব্যংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
এদিকে ঘাতক ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শিশুটি ময়মনসিংহ লাবিব হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানে শুরু থেকে এই নবজাতকের চিকিৎসা করছিলেন কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় শিশুটির শরীরে জন্ডিসের ভাব দেখা যায়।
"নবজাতকের রক্তে উচ্চ বিলিরুবিন মাত্রার কারণে এ জন্ডিস হয়। ৬০ শতাংশ পূর্ণ গর্ভকাল নবজাতকের এবং ৮০ শতাংশ প্রি-টার্ম অর্থাৎ অকালজাত নবজাতকের মধ্যে প্রথম সপ্তাহে জন্ডিস দেখা যায়।
তবে এর বেশির ভাগই নির্দোষ জন্ডিস,যাকে ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বলে। কোন ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়। তাই সুরক্ষার জন্য তাকে ফটো থেরাপি দেওয়া হবে।"
লাবিব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন,চিকিৎসক ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিলে তাকে সোমবার সন্ধ্যায়ই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। এসময় স্থানান্তরের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হলে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে হাসপাতালেই রাখা হয়েছে নবজাতককে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী জানান, শিশুটির চিকিৎসায় ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জল হোসেন এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
ডা. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন জন্ডিসের সমস্যাটি জটিল নয়।
"শিশুটির শরীরে রক্ত কম। তাই ৫০ এম এল রক্ত দেওয়া হয়েছে। গর্ভকালীন সময়ে নাড়ি কাটার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে তাই হয়তো শরীরে রক্তের পরিমাণ কম ছিলো। সাথে শ্বাসকষ্ট ছিল। কোন ধরনের ইনফেকশন হয়েছে কিনা তা জানতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
ভাঙ্গা হাতের অবস্থা আগের মতোই আছে, অবনতি হয়নি। শরীরের ভেতরে আরো কোথাও কোন আঘাত আছে কিনা তার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হবে। শিশুটির নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে।"
মা-বাবা-বোনহারা নবজাতক ও তার অন্য দুই ভাই বোনের জন্য যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন। সোনালী ব্যাংকের ত্রিশাল শাখায় অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়।
হিসাবের নাম 'রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক ও অপর দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব'। এর নম্বর ৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, রাউটিং নম্বর-২০০৬১২৩৫১ । নবজাতক ও তার দুই ভাই-বোন নাবালক হওয়ায় তাদের দাদা এবং ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হবে। যে কোনো ব্যক্তি ওই অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারবেন।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন,'শিশুটির দেখভাল করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সহায়তায় তাদের দাদী সুফিয়া আক্তারের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিশুদের জন্য ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় নিজের নাম প্রকাশ না করে নবজাতকের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এক ব্যাবসায়ী। মঙ্গলবার বিকালে তিনি ত্রিশালে রায়মনি গ্রামে নবজাতকের বাড়িতে সহায়তা পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ১৭ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা করেন। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে সিপনকে (৪২) গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজু নিহতদের গাড়ি চাপা দেওয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। গাড়ির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ। ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ছিল ১৩.৫ টন। ভারী যানবাহন চালানোর জন্য বৈধ লাইসেন্স নেই রাজুর।