সরকারি অফিস সহায়কদের জন্য ২৫ হাজার টাকায় চেয়ার, ৮৫ হাজার টাকায় টেবিল!
১৫-২৫ হাজার টাকায় চেয়ার আর ৪৫-৮৫ হাজার টাকায় টেবিল, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের ২০ তম গ্রেডের কর্মচারী অফিস সহায়কদের আসবাবপত্র কিনতে এ পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে অফিস সহায়কদের বেতন সবচেয়ে কম।
প্রায় ৪৩৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে গাড়ি পার্কিং সুবিধাসহ বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আসবাবপত্র কেনার জন্য মন্ত্রণালয় এক প্রস্তাবে ৯ কোটি টাকা চেয়েছে।
তবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এক সভায় বেশ কিছু খাতে এ পরিমাণ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অযাচিত ব্যয় কমিয়ে কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু সুপারিশ দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অফিস সহায়ক, হিসাব সহকারী ও ক্যাসিয়ারের প্রতিটি টেবিলের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫০০০ টাকা। আইন শাখার অফিস সহায়কদের জন্য প্রতিটি টেবিল ৬৫০০০ টাকা ও প্রতিটি রিভলভিং চেয়ারে ১৫০০০ টাকা ধরা হয়েছে। আবার বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন সেলে চারজন অফিস সহায়কের প্রতিটি টেবিল ৮৫০০০ টাকা ও রিভলভিং চেয়ারের দাম ২৫০০০ টাকা ধরা হয়েছে।
পদ অনুসারে আসবাবপত্রের প্রাপ্যতা এবং বাজার মূল্য যাচাই করে আসবাবপত্রের ব্যয় কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
শীর্ষস্থানীয় আসবাব তৈরি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান অটবি, হাতিল ও নাভানার বিক্রয়কেন্দ্রে ৭০০০ টাকার মধ্যে অফিস চেয়ার, ৯০০০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের এক্সিকিউটিভ চেয়ার, ৬০০০ টাকায় ভিজিটর চেয়ার আর ৭০০০ টাকার মধ্যে টেবিল বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অটবির পান্থপথ আউটলেটের সহকারী ব্যবস্থাপক উৎপল কুমার সরকার জানান, ২০০০০-২৫০০০ টাকা দামের চেয়ারও অটবির আউটলেটে রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সৌখিন ও বিত্তশালীরা সাধারণত এ ধরনের চেয়ার কিনে থাকেন।
সরকারি অফিসগুলোতে সাধারণত ৮-৯ হাজার টাকার চেয়ার কেনা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
চিফ এক্সিকিউটিভ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের টেবিলের দাম শুরু ২৪০০০ টাকা থেকে। এই দামে সেক্রেটারিয়েট টেবিলও বিক্রি করে অটবি।
একই এলাকার হাতিল ফার্নিচারের আউটেলেটে প্রতিটি এক্সিকিউটিভ চেয়ারের দাম শুরু ৯ হাজার টাকায়, নাভানা ফার্ণিচারেও অটবির প্রায় কাছাকাছি দামেই বিক্রি হচ্ছে অফিস চেয়ার।
গত বছরের মার্চে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জারি করা এক পরিপত্রে শুধু সহকারী সচিব থেকে ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাদের জন্য রিভলিভিং চেয়ারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রশাসনের সর্বশেষ স্থার ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২৫ হাজার টাকায় রিভলভিং চেয়ার কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারি প্রকল্পে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়া পাগলামী এবং সম্পদের অপচয়।
"বর্তমান সময়ে ৮৫ হাজার টাকায় সেক্রেটারিয়েট টেবিল পাওয়া যায়। এই টেবিল অফিস সহায়কদের কেন দেওয়া হবে? তারা কি সেখানে পড়াশোনা করবেন? না ফাইল দেখবেন?"
৪৩৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ২০ তলা ভবন নির্মাণ করে অর্ধেক স্পেস সরকারি গাড়ি পার্কিং ও বাকী অর্ধেক অফিসের জন্য ব্যবহার করা হবে। নতুন ভবনে ৮০২টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সচিবালয় এলাকায় যানজট কমে আসবে বলেও প্রকল্পের দলিলে দাবি করা হয়েছে।
পুনর্গঠিত প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সরকারি যানবাহন অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোঃ মামুন আল রশিদ বলেন, নতুন ভবনে তিনটি সম্মেলন কক্ষ নিয়ে সভায় আপত্তি উঠলেও পরিবহন পোল ভবনে প্রায়শই বিভিন্ন মিটিং অনুষ্ঠিত হয় বলে সভায় জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পরিবহণ পোলের নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পিইসি সভায় একমত প্রকাশ করা হয়েছে, তবে কিছু খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
তা ছাড়া মহানগরীর যানযট পরিস্থিতিতে এই ভবন কী ধরনের প্রভাব ফেলবে এ বিষয়ে একটি স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করারও সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন সুপারিশ দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুনর্গঠিত প্রস্তাব কমিশনে আসলে একনেকে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া আবার শুরু হবে।
ডিপিপি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যানবাহন অধিদফতরের লোকবল কিছুটা বাড়ানো হবে। বিষয়টি বিবেচনায় অর্গানোগ্রামে থাকা জনশক্তির চেয়ে বেশি আসবাব কেনা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ভবনটি নির্মাণের কাজ শেষ হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের কয়েকটি উইং সেখানে স্থানান্তর করা হবে। তাদের জন্যও আসবাব কেনা হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায়।
২৫ হাজার টাকার চেয়ার কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাইলে তিনি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরিবহন কমিশনার মোঃ আব্দুস সাত্তার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।