ঈদের পরে কমেছে নিত্যপণ্যের দাম, অপরিবর্তিত চালের বাজার
পবিত্র ঈদুল আজহার বন্ধের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু, অধিকাংশ পণ্যের দাম কমলেও অপরিবর্তীত আছে চালের বাজার।
তবে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে টমেটো, শসার দাম কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।
বাজারে মাছের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কাওরানবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা একেবারেই কম।
সকালে সবজির দাম একটু বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেগুলোর দাম অর্ধেকও হয়ে যাচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে এখনও মানুষ ওভাবে না ফেরার কারণে ক্রেতার চাপ নেই বললেই চলে। ফলে সকালে কোনো কোনো সবজির দাম বেশি থাকলেও বিকালে কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ক্রেতা কম থাকায় এবং সরবরাহে তেমন ঘাটতি না থাকায় অধিকাংশ সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কমে খুচরা বাজারে পটোল, ঢেড়স, বরবটি, কচুমুখী, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পেঁপে, ঝিঙে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের পর কাঁচা সালাদের উপকরণের দামও কমছে প্রায় অর্ধেক। ভালো মানের টমেটো বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। ঈদের আগে যা ছিল ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। আমদানি বন্ধ থাকায় মাসখানেক আগে টমেটোর দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
শসা গতকাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। যা ঈদের আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গাজর বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। আকারভেদে এক ডজন লেবু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকায়। মানভেদে ধনেপাতা ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
এদিকে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। যা ঈদের আগে ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। যা ঈদের আগে ছিল ১০০ টাকার নিচে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে অন্যান্য সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। পাইকারি বাজার থেকেই তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
আগারগাঁও তালতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা জীবন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাজারে পর্যাপ্ত সবজি আছে কিন্তু ক্রেতা কম। ঈদের পরে মানুষের চাপ বাড়েনি তাই সবজির দাম মোটামুটি কমই আছে।"
তিনি জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমেছে। ঈদের সময় নানা পদের খাবারে কাঁচা মরিচের ব্যবহার বাড়ে; যার কারণে চাহিদাও একটু বেশি থাকে।
"বন্যার কারণে অনেক স্থানে কাঁচা মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আমাদের পাইকারিতে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা কমলেও বেড়েছে আলুর দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. মোস্তফা টিবিএসকে বলেন, "পেঁয়াজ ভারত থেকে আসছে বলে বাজারে সরবরাহ ভালো। এর কারণে দাম কিছুটা কম।"
বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ আছে এবং দামও দেড় মাস ধরে অপরিবর্তিত আছে বলছেন বিক্রেতারা। মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৬ টাকা, আটাশ বালাম ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৬৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস হাউজের ফজলুল হক টিবিএসকে বলেন, "চালের দাম গত দেড় মাস ধরে একই আছে। কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা তেমন নেই।"
এ সময়ে সাধারণত চালের দাম কমে, কিন্তু এবার এখনও কমেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে মাছের বাজারে অধিকাংশ মাছেরই দাম কমেছে। বড় রুই মাছের কেজি ৪৫০ টাকা থেকে কমে ৩৫০ টাকা হয়েছে। ইলিশ (মাঝারি) ৮৫০ টাকা থেকে কমে ৭০০ টাকায় নেমেছে।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. মাসুদ টিবিএসকে বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ পর্যাপ্ত কিন্তু ক্রেতা কম। সব মাছেরই দাম ঈদের আগে থেকে কমেছে।
বাজারে ডিমের ডজনে ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়, পাকিস্তানি ২৬০ টাকা প্রতি কেজি।
কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই মুরগির আড়তের বিক্রেতা সুমন টিবিএসকে বলেন, মুরগির দাম বাড়েনি বরং প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে। আগামী সপ্তাহে মুরগির দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।