কাঁচা চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে ট্যানারিতে
ঢাকার সাভারের ট্যানারিগুলোতে দুপুরের পর থেকে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করেছে।
সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ঘুরে দেখা যায় দুপুর ২টার পর থেকেই সেখানকার ট্যানারিগুলোতে ঢাকাসহ এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর পরপরই প্রত্যেককে নিজ উদ্যোগে চামড়ায় লবণ মাখিয়ে তা সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হলেও, দেখা গেছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ এসব চামড়ার অধিকাংশই লবণ ছাড়াই ট্যানারিগুলোতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত আঞ্জুমান ট্যানারির প্রজেক্ট ডিরেক্টর জহিরুদ্দিন্ন সরকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দুপুরের পর থেকেই আমাদের এখানে চামড়া আসতে শুরু করেছে। আজকে হয়তো ২০ হাজারের মতো চামড়া আমরা সংগ্রহ করতে পারব। তবে এসব চামড়ার অধিকাংশই রক্তমাখা চামড়া, নিয়ে আসার পর আমাদের শ্রমিকরাই চামড়াগুলো সংরক্ষণে লবণ মাখাতে শুরু করেছেন।'
চামড়ার মূল্য প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া সংগ্রহ করছি।'
আরেক ট্যানারি ঢাকা হাইডের স্টোর ইনচার্জ মো. সামসুল হক টিবিএসকে জানান, বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া তারা সংগ্রহ করেছেন। সন্ধ্যার পর এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয়ের কথা বলা হলেও বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া নিয়ে আসা একাধিক ব্যবসায়ী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, অন্যান্য বারের মতো এবারও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দিচ্ছে ট্যানারিগুলো।
এ সময় ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে প্রায় ১৮০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী নিখিল দাস টিবিএসকে বলেন, 'প্রতি পিস চামড়া গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেনা পড়েছে আমার। কয়েকটা ট্যানারিতে ঘুরলাম, ট্যানারিগুলো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দাম দিতে চাইছে। এই দামে চামড়া দিলে পুরোই লোকসান হবে আমাদের।'
যদিও চামড়ার মূল্য কম দেওয়ার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, 'সরকার নির্ধারিত মূল্যেই আমরা প্রতিটি চামড়া ক্রয় করছি।'
তিনি বলেন, 'গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির মৌসুমে ট্যানারিগুলো প্রায় ৮৫ লক্ষ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করলেও এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ১ কোটি চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আমাদের। আশা করছি এ বছর লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা চামড়া সংগ্রহ করতে পারব।'
ট্যানারিগুলো বলছে, এ বছর প্রতিটি গরুর কাঁচা চামড়া ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় ক্রয় করা হচ্ছে। লবন মাখানো চামড়া আসতে শুরু করলে তার দাম আরও বাড়বে।
অন্যদিকে বিকালে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার।
কয়েকটি ট্যানারি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে এই খাতকে এগিয়ে নিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে যদিও আমাদের টিম কাজ করছে, তবু সেই উদ্যোগগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, কোথাও কোন সমস্যা আছে কি না, তা দেখতেই আমি আজ এখানে পরিদর্শনে এসেছি।'
এ সময় কোরবানির পশুর চামড়া নিজ উদ্যোগে লবণ দিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ বছর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৭ দিনের মধ্যে বাহিরের চামড়া ভিতরে না আসা, কোরবানিদাতা কর্তৃক নিজ উদ্যোগে চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুযোগ না পায় সেটি নিশ্চিত করা ছিল অন্যতম। কোরবানিদাতাদের প্রতি আমাদের আহবান ছিলো যেন নিজ নিজ পশু কোরবানির পর তারা নিজ উদ্যোগে লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এতে করে চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না, যেটি আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখি। কিন্তু আমি এখানে এসে যা দেখলাম, কিছু চামড়ায় লবণ দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি করা হয়নি।'
এ সময় তিনি আরও বলেন, '২০২৬ সালে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। এটা একদিকে যেমন গৌরবের, সম্মানের, আবার কিছু ক্ষেত্রে আমরা যেসব ডিউটি, কোটা সুবিধা পাই, সেসময় এগুলো হারাব। সুতরাং আমরা রপ্তানির দিকে আরও জোর দিচ্ছি। এখন আমাদের প্রধান যেই রপ্তানি খাত, পোশাক, সেখানে কিন্তু কিছু কাঁচামাল আমাদের আমদানি করতে হয়, কিন্তু এই চামড়ার ক্ষেত্রে কাঁচামালটাই কিন্তু আমাদের। সুতরাং, আমাদের সকলকে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।'