‘হাফ ভাড়া’র বৈঠক আবারও অমীমাংসিত, সংসদে আইন করার দাবি
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করা নিয়ে অংশীজনদের সাথে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বৈঠক আবারও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। শনিবার বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে হয় এই বৈঠক।
বৈঠকে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে বিআরটিএকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
'শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে বিষয়ে বিআরটিএ ও পরিবহন নেতারা অত্যন্ত আন্তরিক। পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,' বলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
তিনি আরও বলেন, 'হাফ ভাড়ার জন্য পরিবহন মালিকদের যে ক্ষতি হবে, তা কীভাবে পূরণ করা হবে? তাদের ক্ষতির জন্য কত ভর্তুকি দেওয়া হবে, এসব সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।'
এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
নূর মোহাম্মদ আরও জানান, ঢাকায় কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, শিক্ষার্থীসংখ্যা কত, তাদের মধ্যে কতজন বাসে ওঠে এসব বিষয়ে তালিকা চেয়েছেন পরিবহন নেতারা। 'আমরা এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারা তথ্য দেবেন।'
পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকার প্রায় ৮০ শতাংশ বাসমালিক গরিব। তারা যদি হাফ ভাড়া নেন, সরকার কীভাবে তাদের এ ক্ষতি পোষাবে আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকও। কিন্তু আগে অনেকগুলো বিষয়ে সমাধান করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
এনায়েত উল্যাহ বলেন, কারা শিক্ষার্থী আর কারা শিক্ষার্থী নয় এ বিষয়েও জটিলতা আছে। বাসে উঠে সবাই বলবে ছাত্র। অনেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য আইডি কার্ড বানিয়ে নেবে। সরকার এটার সমাধান কীভাবে করবে, সেটাও দেখতে হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিআরটিএ অংশীজনদের নিয়ে হাফ পাস চালুর বিষয়ে বৈঠকে করে। কিন্তু সেখানেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার জন্য আইন করার দাবি সংসদে
শনিবার সংসদে 'মহাসড়ক বিল ২০২১'-এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া প্রচলন করতে আইন পাস করার দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এ সময় তিনি হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সমালোচনা করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, 'সড়ক নিরাপত্তা দেওয়ার দাবির সঙ্গে সঙ্গে হাফপাসের একটা দাবি বহুদিন শিক্ষার্থীরা করছেন। অর্থাৎ অর্ধেক ভাড়ায় যেন শিক্ষার্থীরা চলতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শহর এলাকার কিছু বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় ভাড়া বাড়ানোর পরে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সম্প্রতি বাস ভাড়া বাড়ানোর পরে মালিকপক্ষ হাফভাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই জেরে শিক্ষার্থীরা পথে নেমে এসেছে। কিন্তু তাদের উপর ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থী ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিন বছর আগে যখন আন্দোলন হয়েছিল, তখন হেলমেট পরে তারা চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেছিল। এইবার যখন ঝাঁপিয়ে পড়ল হেলমেট পরা দেখি নাই।'
রুমিন বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার আইন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সকলকে সেটা মানতে হবে। শুধু শহর এলাকার বাসে নয়, সকল গণপরিবহনে অবলিম্বে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দিয়ে যাতায়াতের আইনি বিধান করা হোক।
জবাবে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া চালু করা হয়েছে। এটা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। সারা দেশের বিআরটিসি বাসেই এটা চালু করা হবে।
তিনি বলেন, 'বেসরকারি যে গণপরিবহন রয়েছে, তাদের ওপর আমরা জোর করে চাপাতে পারি না। তারা তো সরকারের অধীনে না। সরকারের সঙ্গে হয়তো কাজ করে। বেসরকারি গণপরিবহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাদের নেওয়া দরকার। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।'
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগ বিবৃতি দিয়ে ছাত্রদের হাফভাড়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। যেখানে সাংগঠনিকভাবে তারা হাফভাড়ার পক্ষে, সেখানে তারা হামলা কেন করতে যাবে? যিনি হামলার কথা বলেছন, তাকে বলব তারা যে ছাত্রলীগ তা প্রমাণ করুন।'