‘মনে করেছিলাম আল্লাহর পরে নেত্রী আছেন’: বহিষ্কারের পর গাজীপুরের মেয়র
"আমি মনে করেছিলাম আল্লাহর পরে আমার নেত্রী আছেন। ভেবেছিলাম, যেকোনো বিপদে-আপদে ওনাকে স্মরণ করলে আল্লাহর তরফ থেকে ওনাকে পাবো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়…।"
গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ, দুই-ই হারানোর পর আজ শনিবার এভাবেই সাংবাদিকদের সামনে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার মেয়র জাহাঙ্গীরকে এই শাস্তি দেওয়া হয়।
এ তথ্য জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের আরও বলেন, "তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।"
কিন্তু নিজের ব্যাপারে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র জাহাঙ্গীর পালটা অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন নিজের 'রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ'দের উদ্দেশ্যে।
"তারা যেকোনো মূল্যে আমাকে, আমার পরিবারকে এবং আমার সমর্থকদের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করছে। তারা কোনো সময় চেয়েছে আমাকে হত্যা করতে, কোনো সময় চেয়েছে আমাকে পরিকল্পিতভাবে এখান থেকে সরিয়ে দিতে," শনিবার বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
দলের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "জন্মের পর বাবা-মায়ের কাছে শুনে আওয়ামী লীগ এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকে ছাত্রলীগ করি। কলেজের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাকে তিনবার ভিপি মনোনয়ন দিয়েছে। জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়। ২০১৭ সালে আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন দেন। আমার জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও জাতির জনকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাইরে চিন্তা ভাবনা করি নাই।
"আমার অস্তিত্ব জুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ রয়েছে। আমার সব অস্তিত্বে আমার প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমার অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি মেনে নেব। বিনা কারণে তিনি আমাকে ফাঁসি দিতে চাইলে তাতে আমি রাজি আছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নিয়ে জীবনে কোন ছাড় দেই নাই, ভবিষ্যতে দেব না।"
এরপর তিনি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, "আজ আমি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় ৩২ হাজার বাড়ি ঘর সরিয়ে এবং ৮ হাজার বিঘা জমি মানুষের কাছ থেকে নিয়ে রাস্তাঘাট করেছি যার কোন নজির অন্য সিটিতে নেই। এখানে ৭০০ কিলোমিটার উপর রাস্তাঘাট হয়েছে। রাস্তার জমি এবং মিল-কারখানা নিয়ে আমার নামে কতিপয় ব্যক্তি মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দিয়েছে।"
চলমান করোনা মহামারিতে নিজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, "করোনাকালে আমরা আমাদের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি।"
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে "ভুল বোঝানো হয়েছে" – এমন মন্তব্য করে দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন বলেও জানান তিনি।
"আমি নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো। রিভিউ করবো। উনাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। আমার বক্তব্য নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। ভুল আর অপরাধ তো এক নয়।"
মেয়রের অনুসারীরাও বলছেন, গাজীপুরের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে মেয়রকে যেন স্বপদে রাখা হয়। শনিবার সকালেই দলে দলে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ভিড় জমান মেয়র জাহাঙ্গীরের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করায় আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছেন তার বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ এ ঘোষণাকে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।
আনন্দ মিছিল, আতশবাজি ফুটিয়ে এবং মিষ্টি বিতরণ করে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত সেই নোটিশের জবাবে মেয়র জাহাঙ্গীর দলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন। তিনি আরও দাবি করেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভিডিওতে তার মন্তব্য সম্পাদনা করে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।