‘ইত্যাদি’ খ্যাত আব্দুস সবুর এখন পাগল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন আব্দুস সবুর। ভাগ্যের নির্মমতায় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্র। বর্তমানে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি।
আব্দুস সবুর (৪৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের বল্লী গ্রামের মৃত. আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ‘সাবই ডিনা’ নামেই পরিচিত ছিল সে। বল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক লেখাপড়া জীবন শেষে বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন।
১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য ডাকা হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে। ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আব্দুস সবুর মাথার চুল দিয়ে এক সঙ্গে চারটি মাইক্রোবাস টেনে দেখিয়ে সকলের মন জয় করে নেন।
আব্দুস সবুরের শৈশবের সহপাঠী বিলকিস রেহেনা জানান, আব্দুস সবুর ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও চালাক ছিল। ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতো। স্কুলে সবার সেরা ছিল। কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন মার্শাল আট শিখতো। মাথায় অনেক লম্বা চুল ও মুখে লম্বা দাড়ি ছিল। দাড়িতে ৩-৪ জন বাচ্চা ঝুলিয়ে রাখতো সবুর। এরপর মাথার চুল দিয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার টেনে নিয়ে যাওয়ার চর্চা করে সফলও হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে এই প্রতিভার জন্য ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় সে।
তিনি আরও বলেন, মাথার চুল দিয়ে এক সাথে চারটি মাইক্রোবাস টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইত্যাদিতে দেখানো হয়। ওই সময় সবুরের লেখা ঘোড়ার ডিম নামের একটি শিশুতোষ উপন্যাস প্রকাশ পায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার কিছুদিন পরই সবুরের মাথার সমস্যা দেখা দেয়। সেই থেকে এখনো পাগল অবস্থায় রয়েছে।
বল্লী এলাকার আব্দুস সবুরের বোন সেলিনা আক্তার বলেন, “২০০১ সালে আমার চাচারা সবুরকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। ডাক্তাররা বলেন, মাথার চুল দিয়ে গাড়ি টানার ফলে সবুরের ঘাড়ের একটা শিরা পাম্পের মতো হয়ে গেছে। ওই শিরা ছিঁড়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত না। শিরাটা ফাঁকা হওয়ার ফলে তার মস্তিস্কে এর প্রভাব পড়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে যাবে। সেই সময়ে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে সবুরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে যাওয়ার সময় বেঁধে দেয়। তবে বাড়ি আসার কিছুদিন পর সবুর সুস্থ হয়ে যায়।”
তবে পরবর্তীতে অভাব অনটনের কারণে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। হৃদয়বান কারো সহযোগিতা পেলে সবুরকে সুস্থ করা সম্ভব বলে জানান তার বোন সেলিনা।
আব্দুস সবুরের বিষয়ে বল্লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, “পরিবারটি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। বাবা-মা কেউ নেই সবুরের। একটি বোন রয়েছে। বোন দেখাশুনা করে তার। পাগল হয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, বাজারে আসে। অভাবের কারণে বোনও চিকিৎসা করাতে পারেনি। এলাকায় আগে ইত্যাদি খ্যাত সবুর নামে চিনলেও এখন পাগল নামেই সবুরকে চিনে সবাই।”