‘চীন থেকে ফিরে দেশকে বিপদে ফেলবেন না’
করোনা ভাইরাসের কারণে এই মুহূর্তে দেশে ফিরে দেশকে বিপদে না ফেলার জন্য চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শবনম জেবি। তিনি চীনের হোজোউ শহরের হোজোউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ আহ্বান জানান। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা শবনব জেবি চীন যাওয়ার আগে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সিলেটের নাট্যসংগঠন 'একদল ফিনিক্স' এরও কর্মী ছিলেন তিনি।
করোনাভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত ৩০৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চীনের রাষ্ট্রীর টেলিভিশনের বরাত দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানায়, শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩০০।
চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস। ইতোমধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও। এদের অনেকেই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। শনিবার বিশেষ বিমানে করে চীন থেকে দেশে ফিরেন ৩১২ জন বাংলাদেশি।
এর ঠিক আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে শবনম জেবি বলেন, আমি জেনেছি চায়নায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ টিকিটও কিনে ফেলেছেন। তবে সবার প্রতি অনুরোধ, এই মুহূর্তে দেশে ফিরবেন না। এখানেই থাকুন। এখানে ভালো চিকিৎসা পাবেন। আপাতত দেশে গিয়ে দেশকে ও নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলবেন না। যারা দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের দ্বিতীয়বার ভাবার অনুরোধ জানান জেবি।
লাইভের শুরুতে শবনম বলেন, চায়নার বর্তমান পরিস্থিতি কি সবাই জানেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। হোজোউ সিটির সঙ্গে অন্য শহরগুলোর যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ সব ফটক বন্ধ। গত তিনদিন ধরে আমরা ডরমিটরিতে প্রায় বন্দি অবস্থায় আছি। কেউ ডরমিটরির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই আমাদের খাবার দিচ্ছে। অন্যান্য চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে।
চীনে মহামারি আকার ধারণ করা এই ভাইরাস সম্পর্কে শবনম বলেন, এই ভাইরাসটি মানুষের হাঁচি থেকে ছড়াচ্ছে। কেউ আক্রান্ত একজনের পাশে গেলেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আর এর লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর মতো। এই লক্ষণগুলো ধরা পড়তে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ফলে আমার শরীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই আমি অন্যদের আক্রান্ত করে ফেলতে পারি।
বাংলাদেশের অবস্থা উল্লেখ করে এই তরুণী বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে অনেকে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গু যদি আমাদের এতোটা আক্রান্ত করতে পারে, আর এই ভাইরাসটা অতি সম্প্রতি ধরা পড়েছে, যা সামাল দিতে চায়নার মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে, যেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার আসনের একটি হাসপাতাল বানিয়ে নিচ্ছে এই রোগীদের সামাল দেওয়ার জন্য, তখন আমাদের দেশে এই ভাইরাস ছড়ালে কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর আমাদের বাংলাদেশ এই ভাইরাস মোকাবেলার জন্য এখনও তৈরি নয়। এরমধ্যে আমি যেটা জানি বাংলাদেশের মাত্র দু’টি হাসপাতাল এটার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে। তাও শুধু ঢাকাতে। কিন্তু চায়নাতে যে বাংলাদেশিরা আছেন, তারা কিন্তু শুধু ঢাকার নন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। তারা যখন দেশে ফিরবেন, তখন তারা তাদের পরিবারের কাছে যাবেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তার জন্য চায়না সরকার সবসময় মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে বলছে, জনবহুল জায়গা এড়িয়ে চলতে বলছে। দেশে গেলে আমরা হয়তো তা মানবো না। তখন অন্যরা আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি থেকে যায়।
শবনম বলেন, আমরা যদি ১০০জন মানুষ দেশে যাই, এরমধ্যে যদি ৩/৪জন মানুষও আক্রান্ত হন, তাহলেই কিন্তু দেশে অনেক বড় বিপর্যয় নিয়ে আসবো। আমাদের দেশের জন্য, পরিবারের জন্য বিপদ নিয়ে আসবো।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আমারও কিন্তু ভয় হচ্ছে। আমারও প্রতিদিন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে চলে যাই। পরিবারের সাথে থাকি। কিন্তু ভাবতে হবে, আমরা যে মানুষগুলোকে ভালোবাসি, আমাদের পরিবার বাবা-মা বন্ধুবান্ধব, নিজের অজান্তেই কিন্তু নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সর্বোপরি নিজের দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারি। চীন চেষ্টা করছে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে। আক্রান্ত হলে এখানে উন্নত চিকিৎসা পাবো। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়ার সময় যদি আক্রান্ত হই। তবে দেশের মানুষকে আক্রান্ত করবো। তারা উন্নত চিকিৎসাও পাবো না।
শবনম বলেন, আমি নিজেও খুব ভয় পাচ্ছি। তবু সাহস নিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। আজকে এখানে আমি বিপদে আছি। সেটা বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েও আসতে পারতো। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, সাহস নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। যে ভালোবাসার মানুষের জন্য দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের বিপদে ফেলে দেবেন না। দেশকে বিপদে ফেলবেন না।