৩ বছরেও চিলমারী নদীবন্দরের কার্যক্রম চালু হয়নি
চিলমারী নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের তিন বছর অতিবাহিত হলেও বন্দরের কার্যক্রম এখনো চালু হয় নি।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌপথে মালামাল পরিবহনের জন্য একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা থেকে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ যাতায়াত ছিল।
দীর্ঘ অব্যবস্থাপনা ও নৌপথের উন্নয়ন না হওয়ায় এই নদীবন্দরটি সচল ছিল না। তবে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সফরে গিয়ে চিলমারীকে নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেন।
একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর চিলমারীর রমনা শ্যালোঘাটে পন্টুন স্থাপন করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যা উদ্বোধন করেন তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এছাড়া বন্দরটি উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়।
কিন্তু বন্দরটির ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্ব ছাড়তে রাজি নয় জেলা পরিষদ। বিআইডব্লিউটিএকে না জানিয়ে বন্দরটির ইজারা দেয়া হয়। ফলে দু’পক্ষের মাঝে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্বের।
বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ালে আবারও সৃষ্টি হয় জটিলতা। তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ২০১৮ সালের জুন মাসে চিলমারী সফরে আসেন এবং সমস্যা সমাধান করারও আশ্বাস দেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সমাধান বা নদীবন্দরের কার্যক্রম চালু হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, চিলমারী এক সময় একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এ স্থানটি অনেক আগে থেকেই ‘চিলমারী বন্দর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বন্দর দিয়ে হাজার হাজার মণ পাট, ধান, চাল প্রভৃতি পণ্য নিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত।
ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা হতে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত ছিল। বন্দরটিকে ঘিরে চিলমারীতে গড়ে উঠেছিল বড় বড় পাটের, সরিষার, ধানের, গমের, বাদামের, তিসির ও ভুট্টার গোডাউন। দেশের নামিদামি পাট কোম্পানিগুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট ক্রয় করতেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বিভিন্ন ধরনের মালামাল ক্রয় করার জন্য দিনের পর দিন অবস্থান করতেন।
তবে নদী ভাঙন এবং নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে চিলমারী কেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার দেশের নদনদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা উন্নয়নের প্রকল্প নিয়েছে।
চিলমারী নদীবন্দরটি পায়রা সমুদ্র বন্দর হতে নৌপথে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র নৌরুট। ফলে চিলমারী নদীবন্দরের উন্নয়ন করা সম্ভব হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
এলাকার আ. রহিম, শহিদুলসহ অনেকে জানান, মাসের পর মাস তারপর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো বন্দরের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় আশার আলোর মধ্যে তারা অন্ধকার দেখছেন। তারা দ্রুত নদীবন্দরের কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।
এদিকে গত ২২ নভেম্বর চিলমারী নদীবন্দর পরিদর্শন করে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চিলমারী নদীবন্দর একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার অনুমোদন হয়ে গেলেই এখানে কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। চিলমারী নদীবন্দরে মালামাল উঠানোর জন্য একটি বন্দর এবং যাত্রী উঠানামার জন্য আরেকটি আলাদা বন্দর হবে।’