২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশিদের নিজস্ব ব্যয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
স্বাস্থ্য খাতে দুর্বল বাজেট বরাদ্দের ফলে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা খাতে মোট খরচের ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশই তাদের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করেছে। উক্ত সালে এই ব্যয়ের পরিমাণ আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে জনতহবিলের ঘাটতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জিডিপিতে শতকরা হারের হিসাবে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিচের দিকে।
এখানে আরো উল্লেখ করা হয়, উচ্চ ব্যয়ের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা নিতেই সাহস পায় না । ফলে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং গুরুতর রোগগুলো প্রাথমিক অবস্থায়ই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়না।
জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা কম থাকায় পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খান এবং তাদের দারিদ্র বাড়তে থাকে। সেই সাথে চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ধার করতে হয় কিংবা ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে দিতে হয়। এভাবে বহু পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে, কেউ কেউ সর্বস্বান্তও হয়ে যান বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
'এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) ২০২১' শিরোনামের এই ফ্ল্যাগশিপ প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়। সেই সাথে এডিবি'র ঢাকা কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারটি একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
এডিবি'র সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ভেতরে জনসাধারণের নিজের পকেট থেকে ব্যয়ের গড় পরিমাণ ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর ডেটা উল্লেখ করে চ্যান হং জানান, ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৮ তে এসে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ডব্লিউএইচও-এর ডেটা অনুযায়ী, এই খাতে আফগানিস্তানের মানুষের নিজস্ব অর্থব্যয়ের পরিমাণ ৭৮ শতাংশ, ভারতের ৬৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় ভুটানের জনগণের নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয় মাত্র ১৩ শতাংশ যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। মালদ্বীপের জনগণের খরচ করতে হয় ২১ শতাংশ এবং নেপাল ও শ্রীলঙ্কার জনসাধারণকে তাদের মোট স্বাস্থ্যসেবা খরচের ৫১ শতাংশ নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়।
এডিবির অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে ২০০০ সালে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশের জনগণের নিজের পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬১ শতাংশ, যা প্রতি বছরই আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে বড় পরিসরে স্বাস্থ্য বীমার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র গুটিকয়েক বড় প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগকারীদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা দিয়ে থাকে।
বীমা স্কিম প্রায় না থাকায়, সরকার ও উন্নয়ন বিষয়ক অংশীদাররা সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খরচের হাত থেকে বাঁচাতে মাতৃকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থায়নের ভাউচার প্রদান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের অষ্টম পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনাতেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কম বাজেট বরাদ্দ থাকায় ও জনগণকে বেশি ব্যয় বহন করতে হবে বলে তা অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পনায় দেখানো হয় যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় জিডিপিতে ০ দশমিক ৭ শতাংশতে এসে স্থবির হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরেই এবং অতিসত্ত্বর এই পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবায় জনগণের মাথাপিছু নিজস্ব ব্যয়ের হার বাড়তে থাকায় তা জনসাধারণকে কম আয় ও দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পরিকল্পনায় বলা হয় 'যদিও বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে, তবু স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছরই ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।' ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি করার সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে।