হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চাপ কমেছে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দু্ই নম্বর ভবনের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ড্রাইভার বাবুল, আলমগীর, ফালাক ও শিশির। হাসপাতালের এই ভবনে বয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দু-তিন সপ্তাহ আগেও তারা হাসপাতালগামী রোগীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এখন সেই পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। রোগীর চাপ কমে আসায় হাসপাতালের এই ইউনিটে এখন অ্যাম্বেুলেন্সের আনাগোনা কম।
কোভিড রোগী কী কম আসছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ বাবুল বলেন, 'তিন সপ্তাহ আগেও দিনে ৫-৭টা রোগীকে পরিবহন করতে হয়েছে আমাদের। ধরুন, মিরপুর থেকে একটা রোগীকে পিকআপ করে নিয়ে আসছি, তখন সায়েদাবাদ থেকে আবার কল এলো। তখন রোগীর চাপ ছিল অনেক। এখন দেখেন, আমরা অধিকাংশ সময়ই বসা। এতেই বোঝায় যায়, রোগীর চাপ কম। গত দুদিন ধরে একটাও ট্রিপ নেই।'
মানুষের যাতায়াত সীমিত করায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মেডিকেলের ৭০৫টি শয্যার মধ্যে ২৪৫টি খালি রয়েছে। তবে এখানকার ২০টি কোভিড আইসিইউতে রোগী ভর্তি আছেন।
অধিদপ্তরের গত কিছুদিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেশব্যাপী হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি হওয়ার প্রবণতাও নিম্মমুখী লক্ষ্য করা গেছে। এতে করে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত শয্যা ও আইসিইউ খালি হতে শুরু করেছে।
অধিদপ্তরের বুধবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সর্বমোট জেনারেল কোভিড শয্যা রয়েছে ১২ হাজার ২৬০টি, যার মধ্যে ৮ হাজার ৩৩৫টি খালি আছে। রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ৪ হাজার ৩০ জন।
এই সময়ে দেশের মোট ১ হাজার ৮৪টি আইসিইউর মধ্যে খালি আছে ৪৫৯টি। দেশের সব কোভিড হাসপাতাল মিলিয়ে আইসিইউতে সংকটাপন্ন রোগী ভর্তি আছেন ৬২৫ জন।
এ ব্যাপারে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চালাচল বিধিনিষেধের একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে রোগতাত্ত্বিকভাবেই সংক্রমণের হার কমে আসার কথা। দেশব্যাপী সেই প্রবণতায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে কম। তবে এই পরিস্থিতির জন্য সাধারণ মানুষকে ক্রেডিট দিতে হবে। এবং তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে আরও কিছুদিন ঘরমুখো রাখতে হবে। এছাড়া যাদের জরুরি সাহায্য প্রয়োজন, সেটা পূরণ নিশ্চিত করতে হবে। '
'সরকারি ব্যবস্থাপনা আর সঠিক সিদ্বান্ত যেমন ভালো ফল পেতে সহায়তা করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষও অনেক সহ্য করছে। এটা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে,' বলেন তিনি।
ডা. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, 'সংক্রমণের এই নিম্মমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে আসন্ন ঈদ ও কুরবানির ঈদের হাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগাম ভাবতে হবে। পর্যটন কেন্দ্র, সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনসমাগাম মুক্ত রাখতে হবে।'
এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোতে ৫ হাজার ৬৪৪ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৪১৩ জন। দুই হাজারের বেশি শয্যা রাজধানীতেই খালি আছে।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড রোগীর জন্য এখন আইসিইউ আছে ৭৬৯টি, যার মধ্যে ৩২৮টি খালি রয়েছে। অথচ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে, গত ৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগরীর এসব হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৫৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৩ হাজার ১২২ জন।
তখন রাজধানীর সব কোভিড হাসপাতাল মিলিয়ে মাত্র ৪২৮টি শয্যা খালি ছিল এবং ঢাকার ৩০৫ আইসিইউয়ের মধ্যে খালি ছিল মাত্র ২০টি।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ড. সাগুফতা আনোয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এপ্রিলের শুরুতে যে পরিস্থিতি ছিল, সেটা এখন আর নেই। গত দশ দিনের মতো হলো রোগী কম আসছেন। আমাদের এখানে এখন ৬০ শতাংশের মতো রোগী ভর্তি আছেন।'
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে সংক্রমণ যেমন কমেছে, সেভাবে কোভিড হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপও কমতে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকার তুলনায় মফস্বলে রোগীর চাপ আরও কম।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সেলিম মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের কোভিড ইউনিটে মোট ৩৬টি শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র একজন রোগী ভর্তি রয়েছেন।'
'জনগণ আগের চেয়ে মাস্ক বেশি পরছেন। এছাড়া প্রশাসন, ব্যবসায়ীসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতায় সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। জেলায় বুধবার ৬৩ জনের পরীক্ষায় কোভিড পরীক্ষায় মাত্র ২ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন,' বলেন তিনি।