হাওরে করোনা ও বন্যায় বিপর্যস্তদের রঙহীন ঈদ
ঈদের আনন্দ-আমেজ নেই সুনামগঞ্জে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বাউল লাল শাহ, ধর্মপাশা উপজেলার বাবুপুর গ্রামের গার্মেন্ট ফেরত শ্রমিক আব্দুর রব, এনামুল হক, নূরপুর গ্রামের ঝুমন মোড়লের। করোনার কারণে তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ। তাছাড়া বন্যায়ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করোনার মধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়েই দেখা দেওয়া তিন দফা বন্যায় বিধ্বস্ত মাটির তৈরি কাঁচা বসতঘরগুলো। এখন সেগুলো সংস্কার করবেন সেই উপায়ও নেই। তাই ঈদের আনন্দ পুরোপুরি ম্লান তাদের। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা মাকে নতুন জামাও দেওয়া হয়নি এবার ঈদে।
গত বৈশাখ মাসে করোনায় কর্ম হারিয়ে ঢাকা থেকে ফেরার পর, হাওরে ধান কেটে খাদ্য সংগ্রহ করেছিলেন আব্দুর রব, এনামুল হক এবং ঝুমন মোড়ল। সেটা দিয়ে কোনমতে খাবারের ব্যবস্থা হলেও. সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে পারছেন না তারা। ঈদুল ফিতরও আনন্দহীন কেটেছে। ঈদুল আজহাও নিরানন্দে কাটছে। জীবনে এমন রঙহীন ঈদ আসবে কখনো কল্পনাই করতে পারেননি তারা।
বাউল লাল শাহ করোনার কারণে গানের আসরে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না। তাই ছোট একটি মুদি দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু পুঁজি না থাকায় দোকানে রাখার পণ্য কিনতে পারেননি তেমন। ফলে ক্রেতাও তেমন পাচ্ছেন না।
হাওর এলাকায় সম্প্রতি তিন দফা বন্যায় তার গানের ঘর, মাটির বসতঘর একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সঙ্গীত যন্ত্রগুলোও পানিতে তলিয়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে। দুই সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবাকে এবার ঈদের নতুন পোষাক দিতে পারেননি। হাওরের এই দরিদ্র মানুষের অবস্থা শোচনীয়।
অধিকাংশই এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। বন্যায় তাদের বসতবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজও নেই আগের মতো। সরকার করোনা ও বন্যায় একাধিকবার ত্রাণ দিলেও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক হতদরিদ্র মানুষই ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত আছেন বলে, তারা অভিযোগ করেন।
এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের দ্বারে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি।
নূরপুর গ্রামের ঝুমন মোড়ল বলেন, ''স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। প্রথম লকডাউন চলাকালে সঞ্চিত টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরে আসি। আসার পর পুরো মাস হাওরে ধান কেটে খোরাকি সংগ্রহ করেছি। এখন এই খোরাকি খেয়ে বেঁচে আছি। কোন সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছিনা।''
তিনি আরও বলেন, তিনবারের বন্যা আমার কাঁচা ঘর প্রায় ভেঙ্গে দিয়েছে। এটা সংস্কার করব- সে উপায় নেই। ঈদের আনন্দতো চিন্তাই করতে পারছিনা।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বাউল লাল শাহ বলেন, আমার জীবনে এমন রঙহীন ঈদ আসেনি। করোনায় পেশা হারিয়েছি। তিনবারের বন্যায় গানের ঘর ডুবে কষ্ট করেছে বহুবছরে সংগৃহীত বাদ্যযন্ত্র নষ্ট হয়েছে। ঈদের আনন্দের চাইতে সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য বসতঘরটি সংস্কার বেশি দরকার। কিন্তু, আয়-রোজগার ছাড়া সে উপায় নেই।
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমদ বলেন, সরকার থেকে যে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি তা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করেছি। তারপরও। এদের সংখ্যা বেশি থাকায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, করোনার চেয়ে তিনদফা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার এলাকার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের বসতঘর সংস্কারে কোন বরাদ্দ নেই। তবে আমরা সরকারের কাছে তালিকা করে পাঠিয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সরকার বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবীদের মধ্যে করোনা ও বন্যায় আলাদাভাবে ত্রাণ দিয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করছেন। আমরা তালিকা নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ পাই। তবে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করলে প্রকৃত মানুষজন বঞ্চিত হবেনা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।