সৌদি ও মালয়েশিয়া থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন ৮ বাংলাদেশি
সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে বুধবার রাতে দুই নারীসহ দেশে ফিরেছে ৮ বাংলাদেশির বাক্সবন্দি মরদেহ। স্বজনের আর্তচিৎকার শোনার কেউ নেই। কারণ রাত তখন অনেক গভীর। চলতি বছরে এ পর্যন্ত এভাবে বাক্সবন্দি হয়ে ৪০৯ রেমিট্যান্স যোদ্ধা ফিরেছেন নিথর দেহে।
সৌদি থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন পিরোজপুরের রোখসানা, সুনামগঞ্জের রিপা ও ঢাকার আলমগীর। আর মালয়েশিয়া থেকে যাদের মরদেহ এসেছে তারা হলেন, বান্দরবানের আইয়ুব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিটন মিয়া ও টাঙ্গাইলের আবদুর রহিম। বাকি দু’জনের নাম পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও সৌদি থেকে ২০ নারীসহ আরও ১৮৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে ৮৯ জন এবং রাত ১টা ১০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৮ ফ্লাইটে ফেরেন ৯৪ বাংলাদেশি।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বরাবরের মতো বৃহস্পতিবারও ফেরত আসাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ফেরত আসা সাথী বেগম (৩০) এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে বিমানবন্দর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের সহায়তায় উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
সাথী জানান, তিনি বছরখানেক আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে নিয়োগকর্তার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন।
সাথীর সঙ্গে একই সমস্যা নিয়ে দেশে ফিরেছেন ঢাকার হিরা খাতুন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবেদা খাতুন, সুনামগঞ্জের আমিরুন বেগম, মৌলভীবাজারের ফারজানা আক্তারসহ ২০ নারী।
বৃহস্পতিবার ফেরত আসা পাবনার জেলার শরীফ জানান, মাত্র এক বছর আগে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে কাগজপত্র থাকা সত্বেও শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়।
কিশোরগঞ্জের শাকিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাইরুল ইসলামের গল্পটাও একই। কোনো কারণ ছাড়াই এক বছরের মাথায় দেশে ফিরতে হলো তাদের। তাদের সঙ্গে ফিরেছেন পিরোজপুরের শামীম, ময়মনসিংহের আমিন, কুমিল্লার বাবুল ও রশিদসহ ১৮৩ কর্মী।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন ১৭৫ নারীসহ ৩ হাজার ৬৩৫ বাংলাদেশি। আর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন যাদের পরিচয় ডিপোর্টি।
তিনি আরও বলেন, ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।