সিদ্ধান্ত নিতে গাফিলতি, হবিগঞ্জে পিসিআর ল্যাবের কাজ শেষ হতে বিলম্ব
মেঝেতে টাইলস করা হবে নাকি রং দেয়া হবে- ২ মাসেও এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পিসিআর ল্যবের কাজ শেষ পর্যায়ে এসে থেমে গেছে এখন। যে কারণে করোনা শনাক্তে এখনও সিলেটের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে হবিগঞ্জের মানুষকে। সিলেট গিয়ে নমুনা দিয়ে রিপোর্ট পেতেও কমপক্ষে এক-দেড় সপ্তাহের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এর আগে পিসিআর ল্যাব কোথায় স্থাপন করা হবে এ নিয়েও জটিলতা ছিল, সেটা কাটিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের পরিত্যক্ত 'সংক্রমণ ওয়ার্ডে' পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সংক্রমণ ওয়ার্ডকে ল্যাবের উপযোগী করার জন্য গত ৩০ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জালাল এন্টারপ্রাইজকে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ওই কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। ১৫ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ৮৫ ভাগ কাজ শেষ করতে পেরেছে।
কাজটির তত্বাবধানে থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রিপন দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ল্যাবের মেঝেতে ১৬ বাই ১৬ ইঞ্চি হোমোজিনাস টাইলস লাগানোর কথা থাকলেও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ২৪ বাই ২৪ ইঞ্চি মিরর পলিশ টাইলসের দাবি করায় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মেঝে কেমন হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীরা একেকবার একেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। একবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ইপক্সি (এক ধরণের সিলিং ফ্লোর রেসিন) ব্যবহারের। পরবর্তীতে তা থেকে সরে টাইলস লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ২ মাসেও তারা পাকাপোক্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন পিসিআর ল্যাবটি ঘুরে দেখা যায়, ছোট ছোট ৬টি কক্ষ ও ৩-৪টি ওয়াশরুম, সিলিংয়ে প্লাস্টিকের বোর্ড স্থাপন, বৈদ্যুতিক কাজসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে কথা হয়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি আজিজুর রহমানের সাথে।
তিনি বলেন, "করোনা শনাক্তে জেলাবাসীর জন্য ল্যাবটি খুবই জরুরী। নির্ধারিত সময়ের আগেই যাতে কাজ শেষ হয় এজন্য দিনরাত শ্রমিক লাগিয়ে ৮৫ ভাগ কাজ শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু মেঝেতে কী লাগানো হবে, দেয়ালে কী রং লাগাবো এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের কোন সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় বাকি কাজ শেষ করতে পারছি না"।
যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "পিসিআরের বিষয়টি আমি জানিনা"। তিনি শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ডাঃ আরিফুন্নবী বলেন, "আগে পূর্ত বিভাগের কাজ শেষ হোক, তারপর মেশিনপত্র আসবে, লোকবল নিয়োগ করা হবে। এরপর পিসিআর কার্যক্রম শুরু হবে"।
যোগাযোগ করা হলে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, "পিসিআর ল্যাবটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল স্থান। তাই মেঝেতে কী লাগালে ভাল হবে এ সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হয়েছে। খুব শীঘ্রই মেঝেতে মিরর পলিশ টাইলস লাগানোর কাজ শেষ হবে"। তবে সিদ্ধান্তটি পূর্বে নেয়া হলো না কেন- এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।