সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ, শঙ্কা
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক মিটার দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কম মানুষই মানছেন। জটলা পাকিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়াসহ কাঁচাবাজার, গণপরিবহন, ব্যাংক ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে জনসাধারণের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা বন্ধ না করা গেলে এর ফল খুবই খারাপ হবে। ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
সিলেট: সিলেটে গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তারা যাতায়াত করছেন। তবে জেলা প্রশাসন বলছে আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
মোগলাবাজার যাওয়ার জন্য এর একটি বাসে উঠেছেন সজিবুর রহমান। ভিড় দেখেও বাসে উঠা প্রসঙ্গে সজিব বলেন, ''কিছুটা ভয় হচ্ছে। তবু কি করবো, বাসায় তো যেতে হবে।''
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল কালাম বলেন, আমাদের মতো ঘনবসতির দেশে সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কষ্টসাধ্য। তবু আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
ময়মনসিংহ: দীর্ঘদিন বাসায় বন্দি থাকতে হতে পারে এমন শঙ্কায় ময়মনসিংহের বাজারে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাজারগুলোতে মাইকিং করে ভিড় এড়াতে বলা হলেও সে নির্দেশনা কাউকে মানতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় স্বদেশি বাজারে আফরোজা বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, ''এমন বিপদের কথা আগে শুনিনি। তবে যতই বিপদে থাকি না কেন, না খেয়ে তো আর থাকা যাবে না। তাই যা যা প্রয়োজন কিনতে এসেছি।''
ময়মনসিংহ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শংকর সাহা জানান, মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিংসহ বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা তারা চালাচ্ছেন। তবুও বাজারে লোক সমাগম কমছে না।
যশোর: টিসিবির পণ্য কিনতে যশোরে ভোক্তাদের ভিড় করতে দেখা গেছে। সোমবার বেলা ১১ টায় শহরের ঈদগাহ মোড়ে টিসিবির পণ্য কিনতে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ ভিড় করে। কিছু সময়ের মধ্যে সব পণ্য শেষ হয়ে যাওযায় শতাধিক মানুষ পন্য কিনতে পারেনি।
পণ্য কিনতে আসা মনোতোষ বসু জানান, ঘরে কোনো খাবার নেই। বাধ্য হয়ে চাল-ডাল ও তেল কিনতে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষ করোনার জন্য ঘরে বসে থাকলে কিভাবে সংসার চলবে।
জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, আমরা মানুষকে সচেতন করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
নারায়ণগঞ্জ: সরকারের নির্দেশনা মানছে না নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। নগরীরর দ্বিগুবাবুর বাজার, ওষুধের পাইকারি বাজার কালিরবাজার, চাষাঢ়া বাস স্ট্যান্ড, নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজার ও লঞ্চঘাটে এখনো জনসমাগম হচ্ছে।
লঞ্চঘাটে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাদঁপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, রামচন্দ্রীপুরসহ ছয়টি রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। প্রতিটি লঞ্চেই গাদাগাদি করে যাত্রী উঠছে। চাঁদপুরগামী যাত্রী আকবর হোসেন জানান, শহরের ২৫ মার্চ থেকে দোকানপাট, খাবার দোকানসহ সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনা শহরের মালনী রোডে অগ্রণী ব্যাংক কার্যালয়ের সামনে অন্তত ৫০ জনের জটলা লক্ষ্য করা গেছে। তারা সবাই প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর পরিবারের সদস্য। ওই দিন ব্যাংকটিতে প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণ করছিল।
সেখানে আসা প্রতিবন্ধী নূর ইসলাম বলেন, 'একটা বিরাট বড় রোগ বার অইছে শুনছি। কিন্তু এর বেশি কিছু জানি না'।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, কেউ প্রয়োজনে ব্যাংকে আসলে তাদের সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
রংপুর: করোনা আতঙ্কের মধ্যেই এখনো রংপুরের বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম বাড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন সমাজ। জনসমাগমের বিরুদ্ধে আরও প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন মোড়, দোকানপাট ও মার্কেটের সামনে জনসমাগম দেখা গেছে। ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক রংপুর কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আনাম বেঞ্জু জানান, আমরা জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই। জনসমাগম এড়িয়ে চলাফেরার জন্য আমরা জনগণকে সচেতন করছি। আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি ঘুরবেন না।
দিনাজপুর: সোমবার জেলা আদালত চত্বরে বিপুল পরিমাণ জনসমাগম দেখো গেছে। আইনি সহায়তা নিতে তারা সেখানে এসেছেন।
গোলাম রসুল নামের একজন জানান, ''ছেলে মারামারি করে মামলা খেয়েছে। তার জামিন নিতে এসেছে। উকিল অপেক্ষা করতে বলেছে তাই বসে আছি।''
দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পিপি মিন্টু কুমার পাল বলেন, করোনা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট রয়েছে। যদি সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা: করোনা ভাইরাস আতঙ্ক মানুষের মাঝে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে জনসমাগম। সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের ফাতেমা খাতুন বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে কোমরের ব্যাথায় ভুগছি। স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। চিকিৎসা শেষে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে লেগুনায় চড়ে বাড়ি ফিরছি। কারণ এছাড়া কোনো উপায় নেই।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম বলেন, বাস টার্মিনাল, চায়ের দোকান মার্কেটসহ যে স্থানে বেশি জনসমাগম হয় সেসব এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।