সর্বাত্মক লকডাউনের আগে মার্কেটজুড়ে ক্রেতার ভিড়
গত ৯ দিনের লকডাউন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে খোলা থাকা ৫ দিনের বিক্রিতেই মোটামুটি সন্তুষ্ট দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো। বৈশাখী বিক্রির লক্ষ্যের অন্তত ৬০ শতাংশ পূরণ হয়েছে জানালেও ঈদ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখী বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি না থাকলেও কয়েকদিনে কিছুটা হলেও ঝুঁকির হাত থেকে বের হতে পেরেছেন। এরই মধ্যে অনেকে ঈদের কেনাকাটাও করেছেন বলে জানা গেছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের মধ্যে বন্ধ থাকলেও ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে ৯ এপ্রিল থেকে দোকানপাট খুলে দেওয়ায় গত কয়েকদিনের ন্যায় মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান, মার্কেট ও ফুটপাথগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
মঙ্গলবার রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, ইস্টার্ন মল্লিকা, নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মার্কেটগুলো, বসুন্ধরা শপিং মল, মৌচাক, ফার্মগেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানের মার্কেট ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ স্থানেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে শনি, রবি ও সোমবার এ ভিড় ছিল আরও বেশি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, যারা নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের তারা অধিকাংশই দু'একদিন আগে কেনাকাটা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তবে বড় বড় শপিংমল কিংবা মার্কেটগুলোর চেয়ে নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি ছিল।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৯ এপ্রিল থেকে সকাল ৯টা -বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিপণিবিতানসহ দোকানপাট চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেয়ে ব্যাগ সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই ছিল কঠিন।
এ সময় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় দোকানিদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব মার্কেটের দোকানপাট খোলার কথা থাকলেও, তা মানেননি অনেকেই। নামেমাত্র পানিতে স্যাভলন মিশিয়ে স্প্রে করলেও কারো মধ্যেই ছিল না সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা।
বসুন্ধরা শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা ত্বন্নী সাহা টিবিএসকে বলেন, 'করোনার মধ্যে সবার আগে সুস্থতাটাই জরুরী তাই ছোট পরিসরে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছি। বেঁচে থাকলে বড় পরিসরে করা যাবে। তাই অল্প করে কেনাকাটা করেছি'।
গাউছিয়া মার্কেটে বাচ্চাদের নিয়ে তাদের পোশাক কিনতে আসা রফিকুল হক টিবিএসকে বলেন, 'লকডাউনের সময় বাড়তে পারে সেটা ভেবেই বাচ্চাদের ঈদের পোশাক কিনে রাখছি। সাথে আমরাও অল্প করে কেনাকাটা করছি। করোনার এ প্রকোপের মধ্যে সবার মনেই তো শঙ্কা, তাই ভয় জেনেও প্রয়োজনে বের হয়েছি'।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতাদের অধিকাংশই ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে এবং একটু সস্তামূল্যের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন বলে দাবি তাদের। এ সমাগম নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ফুটপাতগুলোতেই বেশি ছিল।
নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা সাজ্জাদ টিবিএসকে বলেন, 'রবি ও সোমবার ঈদের মতো ভিড় ছিল। তবে বিক্রি স্বাভাবিক অবস্থার মত'।
আজ (১৪ই এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের মধ্যে সব দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় নতুন করে শঙ্কা তৈরী হয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
যদি এ লকডাউনের সময়কাল বাড়ানো হয় এবং ঈদের আগে দোকানপাট তেমনভাবে খোলা না হয় তাহলে গত বছরের ন্যায় এবছরও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটের শিলা ফ্যাশনের কর্মকর্তা আব্দুর রাশেদ টিবিএসকে বলেন, 'গত কয়েকদিন ঈদের মতো বেচাকেনা হয়েছে। বেশি বিক্রি হয়েছে বাচ্চাদের পোশাক। তবে রমজানে বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে'।
গ্রামীণ ইউনিক্লোয়ের বিক্রয় সহযোগী রাজিব হোসেন বলেন, 'পয়লা বৈশাখের আগে আমাদের যে টার্গেট ছিল তার চেয়ে ৬০% বিক্রি হয়েছে। তবে ঈদের আগে খুলতে না পারলে আমাদের সাথে যারা যুক্ত, যাদের পণ্য আমরা বিক্রি করি তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে'।
ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ এর স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা টিবিএসকে বলেন, 'এবারের পয়লা বৈশাখের জন্য তৈরী করা পেশাকের বিক্রি তেমন হয় নি। আমাদের শোরুমগুলোর খরচও উঠবে না। আসন্ন ঈদের আগে যদি আমরা খুলতে না পারি, তাহলে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে যাবে আমাদের কাছে যারা পণ্য সরবরাহ করে তারা'।
তবে আড়ংয়ের সিইও আশরাফুল আলম টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের গত বছর এই সময়ে কোন বিক্রিই ছিল না। ২০১৯ এর সাথে তুলনা করে বলতে পারি এ সময়ে যে লক্ষ্য থাকে তার ৬০% পূরণ হয়েছে। তবে ঈদের আগে বিক্রি না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত কারিগররা। কারণ ঈদের প্রায় ৮০% পণ্য আমাদের হাতে চলে এসছে। এগুলো বিক্রি না হলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব'।
মার্কেটগুলোতে ভিড়ের সাথে সাথে রাস্তায় গণপরিবহনসহ প্রাইভেটকার, সিএনজি, রিক্সার উপস্থিতি ছিল বিপুল। বিজয় স্মরণী, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মগবাজার, পল্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কিছুক্ষণ পরপরই লেগে ছিল যানজট।