সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানিতে তৎপরতা
ভোগ্যপণ্যের দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে এক দিনের ব্যবধানে ক্রেতা কমে গেছে। মঙ্গলবার ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বুধবার বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে।
আড়তদার ও ব্যবসায়ী নেতারা বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ আছে বলে দাবী করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান সিন্ডিকেট করে আড়তদাররা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তাদের চাহিদা মতো পেঁয়াজ কিনতে পারছেন না তারা।
এদিকে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ১ দিনেই ২১ টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পাঁচ দেশ থেকে ১০ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন নিয়েছেন।
নগরীর ফ্রি পোর্ট এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, বুধবার সকালে টেলিফোনে খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা পেঁয়াজ নেই বলে জানিয়েছেন। অথচ মঙ্গলবার প্রতিটি আড়তে পর্যাপ্ত পরিমান পেঁয়াজ দেখেছি। তাহলে কি একরাতেই পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেলো। তিনি আগের কেনা পেঁয়াজ খুচরা কেজি প্রতি ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান।
হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খাতুনগঞ্জে যে পরিমান ক্রেতা ছিলো বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ক্রেতার সংখ্যা ৯০ ভাগ কমে গেছে। দুপুর পর্যন্ত পেঁয়াজ ভর্তি কোন ট্রাক খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেনি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারতীয় বর্ডারে ৭০-৮০ টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলো এলে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়। মঙ্গলবার অধিকাংশ ক্রেতা চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমানে পেঁয়াজ ক্রয় করে নিয়ে গেছে। সেজন্য বুধবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) ক্রেতা তেমন নেই। কেজি প্রতি ৬০ টাকায় পাইকারী দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও এর বাইরে বিভিন্ন উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বাজারে চাহিদামতো পেঁয়াজও পওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান তারা।
মিরসরাইয়ের বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার খবর শুনে দোকানে পেঁয়াজ কিনতে যাই অনেক দোকানে দেখছি পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। অনেকেই ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছে। যেখানে ৪০-৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলো একই পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রির কোন যৌক্তিকতা নেই। পাইকারী বাজারে দাম বাড়ার খবরে খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকান থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে।
মিরসরাইয়ের মিঠাছরা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ বলেন, খুচরা বাজারে পেঁয়াজের যোগান শেষ হয়ে গেছে। আগের চালানের পেঁয়াজ আমরা কেজি প্রতি ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। পাইকারী বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন পেঁয়াজ কিনতে দ্বিধাধন্দে আছি। কয়েকদিনের মধ্যে পাইকারী বাজারে দাম কমে গেলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে।
সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানিতে তৎপরতা
এদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানিতে তৎপরতা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। বাজার স্বাভাবিক রাখতে চীন, মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের প্লান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশনের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়েছে। বুধবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) মায়ানমার থেকে নাজ ট্রেডিং ১৫০০ মেট্রিক টন, ফরহাদ ট্রেডিং ১০০০ মেট্রিক টন, মিশর থেকে মাল্টিকন কার্গো সিস্টেম ১০০০ মেট্রিক টন, আাঁখি এন্টারপ্রাইজ ২০০০ মেট্রিক টন, পাকিস্তান থেকে এম এন্ড এম ট্রেডিং ২০০০ মেট্রিক টন সহ ২১ জন আমদানিকারককে ১০ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে বুধবারও ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারক মেসার্স ফরহাদ ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী নুর হোসেন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় বিভিন্ন দেশও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মায়ানমারে অঞ্চলভেদে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থাও আমরা মায়ানমার থেকে সমুদ্র পথে ১০০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন নিয়েছি। অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এসব পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।