সমস্যার বৃত্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরীব রোগীদের সবচেয়ে বড় ভরসা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল। শয্যা সংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও টিকেট কাউন্টার স্বল্পতার মতো সমস্যায় পীড়িত রোগীরা।
এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে রোগী ও দর্শনার্থীর চাপ কমাতে পারলে ভেতরকার পরিবেশ ৮০ শতাংশ ভালো হয়ে যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ে ১ একর ৭০ শতাংশ জায়গা নিয়ে ১৯৯২ সালে জেলা সদর হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটি ২০১২ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ধীরে ধীরে সম্প্রসারণ করা হয় হাসপাতাল ভবনও।
বর্তমানে হাসপাতালে সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, পেডিয়াট্রিক্স, ডায়রিয়া, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজিসহ নয়টি ওয়ার্ড সচল রয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে দু’টি কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করতেই কাহিল হয়ে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। আর রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে চাঁটাই পেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয় অপরিচ্ছন্ন টয়লেট ও মেঝের সামনে পড়ে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধ।
মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন আসমা বেগম বলেন, আমার নাতি রায়হানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় সে। আমরা বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের সামনে চাঁটাই পেতে আছি। এখানে ময়লা-আবর্জনার কারণে থাকতে সমস্যা হচ্ছে।
হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন নিয়ে সবুর মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছিলাম। টিকিট কাটতেই আধা ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। কাউন্টার আরও বাড়ানো দরকার।
হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন অবস্থা নিয়ে আরিফ মিয়া নামের এক রোগী জানান, পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। তা ছাড়া ওয়ার্ডের মেঝে স্যাঁতসেতে এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই।
হনুফা বেগম নামে রোগীর এক স্বজন জানান, দু’দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। ওয়ার্ডের ভেতরটা তেমন পরিষ্কার নয়। টয়লেটের দুর্গন্ধে সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে যায়।
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন খোদ তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেনও। এ জন্য অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত ২৫ জন হাসপাতালে আসেন। এতে করে টয়লেটগুলোতে অনেক বেশি চাপ পড়ে। হাসপাতাল ভবন সম্প্রসারিত হলেও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা একই রয়ে গেছে। এরপরও হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অভ্যন্তরের পরিবেশ ৮০ শতাংশ ভালো হয়ে যাবে।