শুরু হলো দেশব্যাপী গণ টিকাদান কর্মসূচী

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সারাদেশে আজ গণ টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রবিবার সকাল ১০টা ২০মিনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি এ টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এরপরেই শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে মন্ত্রী নিজে টিকা গ্রহণ করেন।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন শেষে টিকা গ্রহণ করেন।
এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে টিকা গ্রহণ করেছেন। তারা হলেন- বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক।
এর আগে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচী নিয়ে বলেন, 'ঢাকার মোট ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করবে। ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে ২১৯৬টা টিম কাজ করবে। আমাদের সর্বমোট ১০০৫টা হাসপাতালে ২৪০০ টিম কাজ করবে। আমাদের টিম প্রস্তুত আছে ৭,৩৪৪টি। আপাতত ২৪০০ টিম দিয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করছি। প্রতিটি টিমে ১৫০ জনকে টিকা দেবার সক্ষমতা আছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে সকাল ৮ টা থেকে বেলা ২টা বা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে। তবে প্রথম দিন নানা আনুষ্ঠানিকতা থাকায় আগামীকাল সময়টা শিথিল থাকবে'।
ভ্যাকসিন পেতে যারা নিবন্ধন করেছেন তারা নির্দিষ্ট দিন ভ্যাকসিন নিতে যেতে না পারলেও পরে গিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।
তবে ভ্যাকসিন নিতে হলে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতেই হবে। রেজিস্ট্রেশন না করলে সেকেন্ড ডোজ পেতে সমস্যা হতে পারে। কেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে স্বাস্থ্যকর্মীরা সহায়তা করবেন।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা টিকা প্রদান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সেদিন টিকা নিয়েছেন ২৬ জন। এর পরদিন ঢাকার ৫টি হাসপাতালে ৫৪১ জনকে টিকা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের হাতে এখন তিনটি ব্যাচের ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ব্যাচের ভ্যাকসিনের মেয়াদ এপ্রিলে ও একটি ব্যাচের ভ্যাকসিনের মেয়াদ জুন মাসে শেষ হবে। প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র প্রফেসর নাজমুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিটি উপজেলায় ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। শতভাগ উপজেলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলবে।
যারা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, ১৮ বছরের নিচে, প্রেগনেন্ট ও ল্যাকটেটিং মা, যাদের কোভিড-১৯ পজেটিভ আছে তাদের চার সপ্তাহের মধ্যে টিকা দেয়া যাবেনা। সতর্কতার অংশ হিসেবে যারা এখন গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে ভর্তি আছে তারা যেন এখন টিকা না নেয়। যাদের ওষুধে অ্যালার্জি আছে তাদের এ মুহূর্তে টিকা দেয়া হবেনা। পরবর্তীতে টিকা কার্যক্রম কিছুদিন চলার পর আমাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এবং বৈজ্ঞানিক তথ্যর প্রাপ্যতার ভিত্তিতে আপডেট করবো।
চট্টগ্রামে প্রথম করোনা টিকা নিলেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী
নিজে ভ্যাকসিন নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন শিক্ষা উপ মন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
আজ রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।

পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি, করোনাকালীন সময়ে পরিচালিত চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের সিইও বিদুৎ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
রাজশাহীতে ১১টি কেন্দ্রে টিকাদান শুরু
রাজশাহীতে সকাল ১০ টা থেকে ১১টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল ১০টায় করোনার প্রথম টিকা নেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর পর্যায়ক্রমে টিকা নেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদারসহ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সরকারের বিভিন্নস্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাজশাহী নগরীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ লাইন হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাজশাহীতে প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেছেন সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। তবে ১১ টা পর্যন্ত কেন্দ্রে কোনো সাধারণ মানুষকে টিকা নিতে আসতে দেখা যায়নি।
মানিকগঞ্জে টিকা প্রয়োগে ৩৭টি টিম কাজ করবে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভিডিও কনফারেন্সের পর মানিকগঞ্জের ৯ টি কেন্দ্রে করোনা ভ্যাকসিনের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জন শুরুতেই করোনা ভ্যাকসিনের টিকা গ্রহণ করেন।
পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, 'ভ্যাকসিন গ্রহনের ১৫ মিনিটের মধ্যে আমার কোন খারাপ লাগেনি। সুস্থ থাকতে হলে এ ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত'।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা প্রয়োগে ৩৭ টি টিম কাজ করবে। কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে ৮ টি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ৮ টি, পুলিশ হাসপাতালে ১ এবং উপজেলাগুলোতে ৩ টি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ২ টি টিম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রির্জাভ রয়েছে। প্রতিটি টিমে ২ জন করে টিকাদান কর্মী ও ৪ জন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ইতিমধ্যে টিকাদান কর্মীদের ২ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।
বাগেরহাটে করোনা ভ্যাকসিন নিলেন ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জন
সকাল ১১টায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবনে প্রথমে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আনম ফয়জুল হককে টিকা প্রদান করেন সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শাশীম আরা খানম। এরপরেই পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়কে টিকা দেন সিনিয়র ষ্টাফ নার্স নাজমা খানম।ডিসি, এসপির পরে টিকা নেন সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির।
দুপুর ২টা পর্যন্ত বাগেরহাট সদর হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম চলবে। বাগেরহাট জেলায় প্রথম ধাপে ৪৮ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। প্রথম দিনে ১শ ৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।