শনিবার ঘর পাচ্ছে গৃহহীন ৬৬১৯৮ পরিবার

'বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না' মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শনিবার দেশের ৬৬,১৯৮টি গৃহহীন, ভূমিহীন পরিবারকে পাকা ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় ৯ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
'পৃথিবীতে এভাবে সরকারি উদ্যোগে পুনর্বাসন করার কোন নজির নেই। সকল বাড়িতেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বাড়িতে যেসব পরিবার থাকবে, তাদের আয়-উপার্জনের জন্য প্রশিক্ষণ ও ঋণ বিতরণ কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে' জানান তিনি।
মুজিব বর্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তারপরই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ৮,৮৫,৬২২টি ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলোর আওতায় এসব পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ কাজ শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরের নকশা ও ডিজাইন অনুমোদন করার পর সারাদেশে একই রকমের ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও গত ছয় মাসে ৬৬,১৮৯টি গৃহনির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। যাদের জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই- তাদের নিজস্ব জমিতে এবং যাদের জমি নেই, তাদের ২ শতাংশ পরিমাণ খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ২০৯৮ একর খাসজমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী এসব ঘরের সঙ্গে জমির দলিল, নামজারি, খতিয়ান ও সনদ হস্তান্তর করবেন। জমির মালিকানা পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দু'জনকে সমানভাবে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
গৃহহীনদের এভাবে ঘর দেওয়ার ঘটনাকে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে আহমেদ কায়কাউস বলেন, 'আমার চাকরি জীবনের এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। মুজিব শতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জনগণের সেবায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।'
তিনি বলেন, এসব ঘর নির্মাণে তরুণ কর্মকর্তারা দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। তাদের অনেকে ঘর নির্মাণের উপকরণ কম দামে কেনার জন্য ঢাকা এসে কিনে নিয়ে গেছেন। উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি ঘর নির্মাণ করেছে।
তিনি বলেন, 'আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়া হবে। এদের মধ্যে প্রায় তিন লাখের ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। বাকি ৬ লাখের জমি আছে, ঘর নেই। আগামী এক মাসের মধ্যে আরও প্রায় এক লাখ ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করে তা বরাদ্দ দেওয়া হবে। ৯ লাখ দরিদ্র পরিবার ঘর-বাড়ি পেলে দেশে দারিদ্র হারও কমবে।'
পথশিশুদের ঘরে ফেরাতে একটি কর্মসূচি নেওয়া হবে জানিয়ে কায়কাউস বলেন, এজন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কর্মসূচি প্রণয়ণ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে সমাজের বিত্তবান ও ধনী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কায়কাউস বলেন, 'তাদের সহায়তা পেলে দুই বছরের আগেই সবাইকে ঘর দেওয়া সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের কাছ থেকে ৬৫৭০টি ঘর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। '
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রতিটি ঘরে দুইটা বেড রুম, একটা বাথরুম, একটি রান্নাঘর ও একটি বারান্দা থাকছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা খরচ হলেও জমির দাম হিসাব করলে এর মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা হবে। গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে এসডিজি অর্জনও সহজ হবে।
আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ঘরপ্রাপ্ত ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে তারা ৩৫ হাজার টাকা করে ঋণ পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর) চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শন করে ভূমিহীন, গৃহহীন অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ঘর পাচ্ছে ৩৬৭০ পরিবার
বৃহষ্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৩৬৭০টি ভ'মিহীন, গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘর পাচ্ছেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার মানুষ।
এই জেলার ১ হাজার ৯১টি গৃহহীন পরিবারকে শনিবার নতুন ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের ৪৬৮টি, কুমিল্লার ৩৪৩টি, কক্সবাজারের ৩০৩টি, লক্ষ্মীপুরের ২০০টি, নোয়াখালীর ১৫০টি, ফেনীর ১২৫টি এবং চাঁদপুরের ১১৫টি গৃহহীন পরিবার নতুন ঘর উপহার পাবেন শনিবার।
পার্বত্য জেলার বান্দরবানের ৩৩৯টি, রাঙামাটির ২৬৮টি এবং খাগড়াছড়ির ২৬৮টি পরিবারকে এদিন নতুন ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) খন্দকার জহিরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর চট্টগ্রাম বিভাগের ৩ হাজার ৬৭০টি গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে নতুন ঘর তৈরি শেষে হস্তান্তর করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া, আরডিসি নাজমুন নাহার, স্টাফ অফিসার টু ডিসি উমর ফারুক, এনডিসি মাসুদ রানা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আলমগীর আশরাফুল আলম, জিল্লুর রহমান, মিজানুর রহমান, সুরাইয়া ইয়াসমিন, রেজওয়ানা আফরিন ও নরজাহান আক্তার সাথী।