লোকালয় থেকেই শোনা যাচ্ছে গর্জন, সুন্দরবনে বাড়তে পারে বাঘের সংখ্যা
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের লোকালয় তীরবর্তী এলাকায় বেড়েছে বাঘের আনাগোনা। বাঘের গর্জনও ভেসে আসছে লোকালয়ে। তাছাড়া বাঘের আনাগোনার পায়ের চিহ্ন মিলছে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে। বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের গোলাখালি গ্রাম। গ্রামটি সুন্দরবনের চরে অবস্থিত। গোলাখালি গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন গাজীর ছেলে বনজীবী বিল্লাল হোসেন। সুন্দরবন ও উপকূলীয় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
বিল্লাল হোসেন জানান, "চারদিন আগে রাত ১১টার দিকে হঠাৎ প্রচন্ড জোরে বাঘের গর্জন ভেসে আসতে শুরু করে। প্রথমে আতকে উঠেছিলাম বাঘ গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েছে কিনা। কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলাম বাঘটি গ্রামের মধ্যে নয় বন থেকেই ডাকছে। এটি মূলত পুরুষ বাঘ। পুরুষ বাঘের গর্জন অনেক জোরে শোনা যায়। মহিলা বাঘের গর্জন অতটা জোরে হয় না। এক মাসের মধ্যে এমন তিনবার বাঘের গর্জন শুনেছি।"
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, সুন্দরবনে পাশেই দ্বীপ গ্রাম গোলাখালি। বর্তমানে বাঘের প্রজনন মৌসুম চলছে। প্রজনন মৌসুমে বাঘ ও বাঘিনী একত্রিত হয়। অনেক সময় যখন বাঘ বাঘিনীকে তাড়া করে তখন ডাকাডাকি করে। তখনই মূলত সেই আওয়াজ লোকালয়ে ভেসে আসে।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ জানান, "সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বাঘের বিচরণ ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া বর্তমানে বাঘের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ কারণে বাঘের ডাকের গর্জন অনেক সময় লোকালয়ে ভেসে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে বাঘের এমন বিচরণ লক্ষ্য করা যায়নি। চার বছর আগে বাঘ শুমারী করা হয়েছিল তখন সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১১৪টি। তবে এখন এই সংখ্যা আরও বাড়বে।"
চলতি বছর দুইজন মৌয়াল ও একজন বাওয়ালী সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এতে অনেকেই মনে করছেন, সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে সেকারণে বাঘ মানুষের উপর আক্রমণ করছে।
তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান।
তিনি বলেন, "করোনাকালীন সময়ে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এতে করে হরিণ, বানর ও শুকরের পরিমাণ বেড়েছে। বাঘের খাদ্য মূলত এই তিন বন্যপ্রাণি। হরিণ, বানর ও শুকরের বংশবিস্তার বেশি হওয়ায় সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য সংকট এটি বলা যাবে না। বরং সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সেকারণে বিভিন্ন সময়ে জেলে বাওয়ালীদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।"
তিনি বলেন, "ওয়াইল্ড টিম নামের একটি সংগঠন সুন্দরবনে বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করতো। তবে তাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর তাদের কোন কার্যক্রম নেই। বাঘের গর্জন লোকালয়ে আসছে এমন খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধানও করা হয়েছে।"
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন জানান, "২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। ২০১৮ সালের জরিপে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টি। ২০২১-২২ সালে সুন্দরবনে বাঘ গণনার পরিকল্পনা রয়েছে। গণনা শেষে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তবে ধারণা করা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।"
সুন্দরবনের খাদ্য সংকটে বাঘ জেলে বাওয়ালীদের উপর আক্রমণ করছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "সুন্দরবনে বাঘের কোন খাদ্য সংকট নেই। সুন্দরবন হচ্ছে বাঘের ভূমি। জেলে বাওয়ালীরা বাঘের ভূমিতে যাওয়ার ফলে বাঘ আক্রমণ করছে। কেউ কেউ নিহত হচ্ছে। নিহতদের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা করে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত ২০ বছরে দুই শতাধিক জেলে বাওয়ালী বাঘের আক্রমণে নিহতের ঘটনা ঘটেছে।"