লকডাউনে যানবাহন সংকটে ভোগান্তিতে ফ্রন্টলাইনাররা
লকডাউনের প্রথম দিন গণপরিবহন না থাকায় কর্মক্ষেত্রে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ফ্রন্টলাইনারদের। কাজে যেতে একদিকে যানবাহন পেতে সমস্যা হয়েছে অন্যদিকে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে তাদের। ফ্রন্টলাইনারদের বহনের জন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কোভিড-১৯ ল্যাবের একজন প্রযুক্তিবিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অন্যান্য দিন মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে রিকশা ও বাসে করে হাসপাতালে আসতে খরচ হয় ৩০ টাকা। কিন্তু লকডাউনের কারণে সোমবার রিকশায় যাতায়তে খরচ হয়ছে ২০০ টাকা। এছাড়া ঠিক সময়ে যানবাহন পাবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তো ছিলোই। সংক্রমণ বাড়ায় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে এখন লকডাউনের কারণে ভোগান্তিও বেড়েছে'।
তিনি আরো বলেন, 'লকডাউনে যানবাহনের ব্যবস্থা করতে আমরা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। এখন দেখা যাক কি হয়। নাহলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লকডাউনে অফিসে গিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে'।
শুধু ওই প্রযুক্তিবিদ নয়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ ব্যবস্থাপনায় কাজে যেতে হয়েছে। রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউন ঢিলেঢালা হওয়ায় পথে পুলিশের বাঁধা পায়নি তারা, তবে যানবাহন পেতে সময় লেগেছে ও বেশি খরচ হয়েছে।
সোমবার শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) তাদের স্টাফদের জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করেছিল বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো খোরশেদ আলম টিবিএসকে বলেন, 'লকডাউনের কারণে হাসপাতালে স্টাফদের সংখ্যা এখন কমানো হয়েছে। স্টাফদের বিএসএমএমইউ এর গাড়িতে আনা নেয়া করা হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিনেশনের কাজে যেসব ভলান্টিয়ার রয়েছে তাদের এখনো নিজস্ব ব্যবস্থায় আসতে হয়েছে। ভলান্টিয়ারদের বিএসএমএমইউ এর ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে'।
যদিও সরকারের লকডাউনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সকল সরকারি/আধা সরকারি স্বায়ত্বশাসিত অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা নেয়া করতে পারবে। শিল্প কারখানা শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের যানবাহনে আনা নেয়া করতে হবে।
তবে লকডাউনে যেসব হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক জুম মিটিংয়ে আমরা লকডাউনে স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াত সমস্যার কথা জানিয়েছি। মন্ত্রী মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতালগুলোতে বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করার জন্য। তাই আমরা আশা করছি কাল পড়শুর মধ্যেই বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে কর্মীদের আনা নেয়া করতে পারবো'।
শুধু স্বাস্থ্যকর্মীরাই নয় কাজে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ব্যাংকারসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইনারদেরও।
রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, 'লকডাউনে অফিসের সবাইকে নিজ ব্যবস্থায় আসতে হচ্ছে। গণপরিবহন না থাকায় যাতায়াত খরচ অনেক বেড়ে গেছে'।
তিনি বলেন, 'এবারের লকডাউনে আমাদের মানসিক চাপ বেড়েছে। এর আগে সাধারণ ছুটির সময় ভাতার ব্যবস্থা ছিলো, এবার সেটিও নেই। যানবাহনেরও ব্যবস্থা নেই। অর্ধেক জনবল দিয়ে আট ঘণ্টার কাজ তিন ঘণ্টায় করাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে যদি ব্যাংকে আসতে পারি তাহলে কর্মঘণ্টা কমিয়ে এতো চাপে রাখার মানে কি'।
তবে গার্মেন্টস কর্মীরা কারখানার আশেপাশেই বসবাস করায় যানবাহন নিয়ে তাদের ভোগান্তির কথা জানা যায়নি। যেসব জায়গায় কর্মীরা বাসে যাতায়াত করেছে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সহায়তা করেছে।