রোগীর সংস্পর্শে গেলেও আইসোলেশনে যেতে পারবে না চমেকের স্বাস্থ্যকর্মীরা, মিলবে না সুরক্ষা সামগ্রী
কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার পরেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইসোলেশনের যেতে পারবে না উল্লেখ্য করে একটি নির্দেশনা জারি করেছে চমেক কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া কাউকে কলেজ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী সরবররাহ করা হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশনায়।
৩০ মে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য জরুরী ৫টি নির্দেশনা জারি করা হয়।
চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ শামীম হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে নির্দেশনাগুলো জারির পর শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো এসব নির্দেশনা অমানবিক উল্লেখ দ্রুত নির্দেশনাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
চমেকের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সাধারণ কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে পাঠাচ্ছে প্রশাসন, এ ছাড়া লকডাউন করে দেওয়া হচ্ছে সবকিছু। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী চমেকের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্তের সংস্পর্শে গেলেও আইসোলেশনের যেতে পারবে না। এটা অমানবিক।
তিনি আরও বলেন, ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন। তাই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু নির্দেশনায় বলা হয়েছে কোনো ধরনের সুরক্ষায় সামগ্রী সরবরাহের সুযোগ নেই।
অন্যদিকে আক্রান্তের সংস্পর্শে যাওয়ার পরেও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা না হলে স্বাস্থ্যকর্মীর সংক্রমণের উৎস হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন শিক্ষক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন অনুযায়ী আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। কিন্তু চমেক কর্তৃপক্ষ উল্টো পথে হাঁটছে। তারা বলছে, সংস্পর্শে যাওয়ার পরেও আইসোলেশনে যেতে হবে। এতে করে স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমণের উৎস হয়ে উঠতে পারে। এই ধরনের নির্দেশনা জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলবে।
এদিকে নির্দেশনা জারির পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোভিড মোকাবেলায় গঠিত কমিটির চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, নির্দেশনাগুলো আমি দেখেছি। এটি দিয়ে চিকিৎসকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিকভাবে রোগী সংস্পর্শে গেলে আইসোলেশন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চমেকের অধ্যক্ষ সেটি নিষেধ করতে পারে না। তিনি এটি অমানবিক আচরণ করেছেন।
জারিকৃত নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-
১) যে সমস্ত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ পজিটিভ (আক্রান্ত) হবেন কেবলমাত্র তারা ১০ দিনের আইসোলেশন বা হাসপাতালে অবস্থানের সুযোগ পাবেন।
২) যে সমস্ত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগী সংস্পর্শে আসবেন তাদের কাউকে কোনো প্রকার আইসোলেশনের যেতে হবে না। কেউ গিয়ে থাকলে তিনি অনুপস্থিত হিসাবে গণ্য হবেন।
৩) যে সমস্ত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সাথে কোনো ফ্ল্যাট বা বাসায় অবস্থান করেন এবং ওই ফ্ল্যাট বা বাসা লকডাউন হলেও ওই সমস্ত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লকডাউনের আওতার বাইরে ধরে নিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হতে হবে।
৪) সকাল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস সময় সূচী অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৫) কোনো সুরক্ষা সামগ্রী চমেক থেকে সরবরাহ করা হবে না।
এই বিষয়ে জানতে চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ শামীম হাসানকে শনিবার বিকেল একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অধ্যক্ষের ফোনে সংযোগ পাওয়া গেলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।