রেড জোনে শয্যা ও চিকিৎসক সঙ্কট, বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে মহামারি
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিপরীতে পজিটিভ শনাক্তের হার ৭ থেকে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। কোনো কোনো জেলায় পজিটিভিটি রেট ৪০-৫০ শতাংশ।
রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক হাসপাতালের মেঝেতে রোগী রাখা হচ্ছে। রোগীর চাপে শয্যা বাড়ানোর পর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অধিক সংক্রমিত জেলায় চিকিৎসক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা জেলাগুলোর একটি হলো; রাজশাহী, সেখানে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন। এছাড়া, পাশের জেলা চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আরও তিন রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি আছে ২৯০ জন। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ২৭৭ জন। বুধবার থেকে হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৬টি শয্যায় নতুন করে করোনা রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য মোট ২৭১টি শয্যা রেয়েছে। বেডের অতিরিক্ত যে রোগী আছেন, তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সামলানো হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার নাগাদ পজিটিভ শনাক্তের হার টানা পঞ্চমদিনের ন্যায় বেড়ে ১৩.২৫ শতাংশ উন্নীত হয়েছে, যা ৪৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে সংক্রমণের হার। বিগত ২৪ ঘণ্টার মেয়াদে নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২,৬৭৬ জনের। এতে মহামারি দেখা দেওয়ার পর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮,২০,৩৯৫ জনে উন্নীত হয়।
একইসময়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৪০ জন মারা যান, ফলে মোট প্রাণহানি ১২,৯৮৯ জনে উন্নীত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, ১০০ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ১৩০ জন রোগীকে কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শয্যা না থাকায় সেখানে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদি নেওয়াজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাসপাতালে বেডের তুলনায় রোগীর চাপ বেড়েছে। একটি বেড খালি হলেই মুহূর্তে সেটি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।"
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হার থাকা জেলাগুলোকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ৫-৯ শতাংশ হার থাকা জেলাগুলোকে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' ও ৫ শতাংশের নিচের জেলাকে 'স্বল্প ঝুঁকির অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করছে।
বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগ সংক্রমণ হারে অন্যান্য জেলাকে ছাড়িয়ে যায়, এখানে পরীক্ষার বিপরীতে ৩৮.৯২ শতাংশ পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। গত কয়েক দিন চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল বেশি।
আর উচ্চ-ঝুঁকির আরেক জেলা খুলনার সাতক্ষীরায় পজিটিভ শনাক্তের হার ছিল ৫০.৫২ শতাংশ। ৩১.২৫ শতাংশ সংক্রমণ হার নিয়ে রংপুর বিভাগেও ব্যাপক প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
উত্তরপশ্চিমের জেলা; নাটোর, জয়পুরহাট এবং বগুড়াতেও বাড়ছে সংক্রমণ হার।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ও নতুন রোগী ভর্তি বেড়েছে। অতিরিক্ত বেড বাড়ানো সত্বেও মেঝেতে রেখে কোভিড রোগীদের চিকি'সা দেয়া হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেলে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন সাতজন। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে যে ১২ রোগী মারা গেছেন, তাদের মধ্যে রাজশাহীর ৯ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন সাতজন ও করোনার উপসর্গ ছিল পাঁচজনের।
এব্যাপারে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিধিনিষেধ জারির পাশাপাশি, ওইসব এলাকার মানুষকে কিভাবে টিকার আওতায় আনা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে জেলাগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসক পাঠানোরও।
করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় চলমান লকডাউনকে আরও সাতদিন বর্ধিত করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বেলা ২.৩০ মিনিটে এই ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল।