যেভাবে চলছে রূপগঞ্জের লকডাউন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নকে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে ওই এলাকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তারা সবাইকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। বোঝাতে থাকেন করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা।
শুক্রবার সকাল থেকেই সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হাট-বাজার ও দোকানপাট ছিল বন্ধ। ওষুধের দোকান ছাড়া কোনো দোকান খোলা পাওয়া যায়নি। সরকারের বিধি অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনের আহ্বানে লকডাউন অঞ্চলে সকল মসজিদে জুমার নামাজের জামাতে ৮-১০ জনের বেশি উপস্থিত হননি।
লকডাউন অঞ্চলে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি থানা পুলিশ সদস্যরাও খণ্ড খণ্ড ভাগে বিভক্ত হয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। এ সময় বিনা কারণে কেউ রাস্তায় বের হলেই পড়তে হয় জেরার মুখে। ফেরত পাঠানো হয় ঘরে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে লকডাউন অঞ্চলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সভা করেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
ওইদিন দুপুর থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে মাইকিং করে লকডাউনের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। বিনা কারণে কেউ যেন রাস্তায় না বের হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে ওষুধপত্র কেনার জন্য কেউ বের হলে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হবে বলে এলাকাবাসীকে মাইকিং করে সচেতন করা হয়।
প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘর থেকে বের না হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এদিকে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে দেখা যায়, এলাকায় লকডাউন কী রকম চলছে, তা দেখার জন্য অনেকে রাস্তায় বের হয়েছেন! এ সময় অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায় নি। মাস্ক-গ্লাভস না পরার বিষয়ে তারা নানা অজুহাত দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫ জন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। বর্তমানে ৩২ জন নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত বারটা থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবার সকালেও বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন শতভাগ নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এ তৎপরতা আগামি ১৪ দিন টানা অব্যাহত থাকবে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতার কারণে সদর ইউনিয়নে লকডাউন শতভাগ কার্যকর হয়েছে। আশা করি, স্থানীয় জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামি ১৪ দিন ঘরে থাকবে।'