মৃত্যুর ৬ মাস পর চিকিৎসককে বদলি!
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের রেসপিরেটরী মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জীবেশ কুমার প্রামাণিক (স্বপন) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬ জানুয়ারি। মৃত্যুর ৬ মাস পর সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পদায়ন করেছে।
উপসচিব জাকিয়া পারভিন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো। বর্ণিত চিকিৎসকগণ ৭ জুলাই পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন।'
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৪৩ টি প্রজ্ঞাপনে দেশের এক হাজার ৩০০ চিকিৎসকে দেশের বিভিন্ন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বদলি করেছে। ৪৫.০০.০০০০.১৪৭.১৯.০১৪.১৯-৪৪২ নম্বর প্রজ্ঞাপনের বদলির তালিকায় রাখা হয়েছে মৃত ডা. জীবেশ কুমার প্রামাণিকের নাম। গতকাল সন্ধ্যায় আদেশটি জারি হতেই এ নিয়ে রাতেই চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতে কি অব্যবস্থাপনা চলছে এটাই তার সবচেয়ে বড় উদাহারণ।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. গওসুল আজিম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিষয়টি আমাদের কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।'
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, 'বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা জীবেশ কুমার প্রামাণিক নামে একজন চিকিৎসককে বদলির তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে করে বোঝা যায় সারা দেশের অপরিকল্পিত, অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর বদলি।'
এ বিষয়ে জানতে উপসচিব জাকিয়া পারভিনের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
ডা. জীবেশ কুমার প্রামাণিক (স্বপন) রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীকালে ২২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
এদিকে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ি সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। চিকিৎসা শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫৬ জন কর্মকর্তাকে (চিকিৎসক) আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। এদিকে একযোগে এতসংখ্যক চিকিৎসককে বদলির কারণে হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর।
তিনি দ্য বিজসেন স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'এক সঙ্গে হাসপাতাল থেকে এত চিকিৎসক নিয়ে গেলে আমার এখানে চিকিৎসার জন্য লোক থাকবে না। এ কারণে করোনা ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমি বিষয়টি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করেছি। সার্বিক বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি।'
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, 'হাসপাতালে সব সিনিয়র চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়েছে। আমাদের বর্তমান অবকাঠামোয় সবাইকে বসতে দেওয়ারও জায়গাও হবে না।'