সবার মাঝে ব্যতিক্রম ময়মনসিংহের মেয়র টিটু

ময়মনসিংহ জুবলি ঘাট এলাকায় থাকেন সুমন দাস। সেলুনে কাজ করেন তিনি। চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন কর্মহীন থেকে খাদ্য সংকটে পড়েছেন সুমন। লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ আনতে সংকোচ লাগে তার। একদিন তার বাড়িতে পৌঁছে যায় চাল, ডাল, তেল ওআলুভর্তি একটি বস্তা। জানতে পারেন, সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু তার মতো মানুষের তালিকা তৈরি করে এভাবেই বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমন অভিজ্ঞতা নগরীর অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যখন অনেক জনপ্রতিনিধি নিরাপদ থাকতে ঘরে থাকছেন, তখন সাধারণ মানুষের পাশে যারা সবসময় থাকছেন, তাদেরই একজন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
প্রতিদিন তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে। সরকারের ত্রাণ যোগ্য মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে কি না তা সরেজমিনে তদারকি করছেন। রোববার পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪৩ হাজার ৫০০ প্যাকেট খাবার তিনি বিতরণ করেছেন। আর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয়েছে ৬৯ হাজার প্যাকেট। প্রতি প্যাকেটে ছিল পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল ও দুই কেজি আলু। কিছু প্যাকেটে ছিল এক কেজি তেল ও সাবান। এ ছাড়া চার হাজার ৭৫৫ জনকে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

মেয়র ইকরামুল হক টিটু সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যান সিটি করপোরেশনে। শেষ করেন দাপ্তরিক কাজ। এরপর শুরু করেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম। বিকেল থেকে শুরু হয় অসহায় মানুষদের খোঁজ খবর নেওয়া। কোথায় কেউ অভুক্ত থাকলে দেওয়া হয় ত্রাণ। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলে রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত। রাতে বাসায় ফিরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হন। ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করে বাড়ি ফেরেন মধ্যরাতে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ত্রাণ দিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে, ত্রাণ দেওয়ার পদ্ধতি এখনো সেকেলে। তাই সঠিক ব্যক্তির হাতে সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, 'তবে সিটি মেয়র তালিকা করার ক্ষেত্রে নিজে মাঠে থাকার কারণে এ ধরনের সমস্যা অনেক কম হচ্ছে। এখনো ত্রাণ নিয়ে কোনো অনিয়ম বা চুরির খবর পাওয়া যায়নি।'
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শংকর সাহা বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পাশেও থাকছেন মেয়র। পণ্যের বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করাসহ তাদের সমস্যাগুলোও নিজে থেকে সমাধান করছেন।
'ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োজন কম পড়ছে। মেয়র সরেজমিনে থেকে সমস্যাগুলো দেখে সমাধান করায় এটি সম্ভব হয়েছে।'- যোগ করেন শংকর সাহা।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, শুধু ফেসবুকে ছবি দিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করে মানুষের প্রশংসা পাওয়া যায়। তবে খোঁজ নিয়ে যোগ্য লোকের হাতে বাজারের ব্যাগটি পৌঁছে দিতে না পারলে সেই প্রশংসার কোনো মূল্য থাকে না।

তিনি বলেন, যারা ভোট দেয়, তাদের মধ্যে অসহায় কারা- সেটি যদি ব্যক্তিগতভাবে জানাশোনা না থাকে, তাহলে একজন জনপ্রতিনিধির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কিছুই হতে পারে না।
'যখন সুখে আছে তখন তাদের খোঁজ খবর রাখার দরকার মনে করি না। তবে তাদের দুঃখের সময় পাশে গিয়ে দাঁড়ানোটাই আমার কাজ। তাই ঘরে বসে থাকলে হবে না। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কাজ করার চেষ্টা করছি।'- যোগ করেন মেয়র টিটু।
এদিকে মেয়র টিটুর সহধর্মিনী মিলা হক জানান, স্বামীকে নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন তিনি। এই মহামারির সময়ে অন্যদের মতো স্বামীকেও তিনি বাসায় রাখতে চান। 'তবে বাস্তবে তা সম্ভব না। মানুষের জন্য তাকে কাজ করতে হয়। তাই শঙ্কা থাকলেও তাকে বাইরে যেতে দিতে হয়।'
নগরীর ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বলেন, ত্রাণ সহায়তা গুছিয়ে দেওয়ার কারণে প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিরা সাহায্য পাচ্ছেন। মেয়র সার্বক্ষণিক মাঠে থাকার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের পেক্ষাপটে বাইরে বের হয়ে কাজ করতে আমার ভয় লাগে। তবে মেয়রের ত্রাণ বিতরণের ছবি দেখে মনে সাহস পাচ্ছি। তার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে কাউন্সিলররা উৎসাহ পাচ্ছেন, তৎপর হচ্ছেন।'