মরা বাঘ নিয়ে উত্তর নেই অনেক প্রশ্নের
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহীন থেকে গত রোববার একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়। বনবিভাগের কর্মকর্তারা বার্ধক্যজনিত কারণে বাঘটি মারা গেছে দাবি করলেও দাবির পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেননি তারা।
মরা বাঘটি নিয়ে বন বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলেও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ, ঠিক কোন এলাকায় বাঘটি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাসহ বেশ কিছু প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি।
যে ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন এলাকা থেকে বাঘটি উদ্ধার করার দাবি করেছে বন বিভাগ, সেই স্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, চুনকুড়ি ও মাহমুদা নদীর সংযোগস্থল থেকে রোববার সন্ধ্যার দিকে মৃত বাঘটি উদ্ধার করা হয়। স্থানটি কৈখালী ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন।
কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা হারুণ অর রশিদ বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বাঘের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কীভাবে পাওয়া গেল বা কী হয়েছে সেটি আমি বিস্তারিত শুনিনি। মরগং এলাকায় পাওয়া গেছে, শুধু এটা জানি। আমার এরিয়ার মধ্যে নয়, বাঘটি কদমতলা স্টেশন এরিয়ায় পাওয়া গেছে।"
কদমতলা স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, "মৃত বাঘটিকে যেখানে পাওয়া গেছে সেটি কদমতলা স্টেশনের মধ্যে নয়। এটি পাওয়া গেছে কৈখালী ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন মরগাং টহল ফাঁড়ি এলাকায়।"
জানা যায়, রোববার (৭ নভেম্বর) সকালে সুন্দরবন ফেরত কয়েকজন স্থানীয় জেলে বন বিভাগের কার্যালয়ে মৃত বাঘের খবর দেয়। বন বিভাগের পক্ষ থেকে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি দল পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। সে দলে স্থানীয় সংবাদকর্মী জিএম মাসুম বিল্লাহ্ যোগ দিতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মাসুম বিল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরবর্তীতেও ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু মেলেনি বন বিভাগের অনুমতি।
বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, "সোমবার (৮ নভেম্বর) সাতক্ষীরা থেকে ভ্যাটেনারি সার্জেন্ট এসে নমুনা নিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে বাঘটিকে দোবেকী ফরেস্ট ক্যাম্পে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ডিএফও (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) স্যার মৃত বাঘটিকে দেখেছেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।"
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মহসিন হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফোন নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো জবাব মেলেনি তার।
ঘটনাস্থলে যেতে সাংবাদিকদের বাঁধা দেওয়া, বাঘের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রেগে যান সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান। বলেন, "ছবি ভিডিও দেওয়ার মতো না। কেউ যদি অভিযোগ করে বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে, তবে সেই প্রমাণ করুক কে কীভাবে হত্যা করেছে। এটি বাঘ কি না তাতেও আমার সন্দেহ আছে। এটি বাঘের আদলে দেখতে।"
মৃত প্রাণীটির একটি ছবি এসে পৌঁছেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে। ছবিতে দেখা গেছে, লাল পলিথিনে জড়ানো প্রাণীটির দেহে পচন ধরেছে। পোকায় ছেয়ে গেছে মরদেহ।
বাঘটির প্রাথমিক ময়নাতদন্তকারী ভেটেনারি সার্জেন্ট, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিত কুমার মন্ডল বলেন, বাঘটি ছয়-সাত দিন আগে মারা গেছে। পেটের মধ্যে কোনো খাবার ছিল না। অভুক্ত অবস্থায় ছিল বাঘটি। শরীরের বাইরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।