ভোজ্যতেল বিক্রিতে সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না ব্যবসায়ীরা
ভোজ্যতেল বিক্রিতে সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। যার ফলে আগের মতো এখনো অস্থির রয়েছে ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজার। দাম নির্ধারণের পর গত চার দিনে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম মণে কমপক্ষে ১৫০-২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিমণ সয়াবিন তেলের দাম মণে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল সপ্তাহের শুরুতে বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকার নিচে। অথচ চলতি সপ্তাহের প্রথমদিন গতকাল শনিবার মিলগেটে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দামে। সেই হিসেবে, বর্তমানে মিলগেটে প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
অথচ সরকার মিলগেটে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করেছে ১০৭ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামে মিলগেটে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৬৫ টাকা দামে। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী- সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি মণ সয়াবিন ১৩৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরকার মিল পর্যায়ে প্রতিলিটার পাম সুপার অয়েলের দাম নির্ধারণ করেছে ৯৫ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মণ পাম সুপারের দাম হয় ৩ হাজার ৮৮৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিমণ পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯৯০ টাকা দামে। সেই হিসেবে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ পাম সুপার। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় আড়াই টাকা বেশি দামে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি লিটার পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯৭ টাকা দামে।
আর গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে পাম সুপারের দাম মণে প্রায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতি মণ পাম সুপার ৩ হাজার ৯৯০ টাকা বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে একই পাম সুপার বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৮৫০ টাকার নিচে।
এদিকে সরকার খোলা পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ না করলেও গত সপ্তাহে এই তেলের দামও মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দামে। যা গত সপ্তাহের শুরুতে ৩৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
পাইকারিতে নির্ধারিতে দামের চেয়ে বাড়তি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হলেও খুচরায় প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্যের দাম এখনো নির্ধারিত দামের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে খুচরা বাজারে রূপচাঁদা ব্রান্ডের প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩০ টাকা, দুই লিটার ২৪০ টাকা, তিন লিটার ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটার ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের ৫ লিটার ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারিী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরে দেশিয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম অস্থির। আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অস্থির বাজারের লাগাম টানতে এরমধ্যে মিলগেট, পরিবেশ এবং খুচরা পর্যায়ে খোলা ও প্যাকেট-বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। তিনি আরো বলেন, কোম্পানির প্যাকেট কিংবা বোতলজাত পণ্যে নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে। কিন্তু মিলগেট কিংবা পাইকারি বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আরো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।
বাড়তি দামে ভোজ্যতেল বিক্রির বিষয়ে খাতুনগঞ্জের অন্যতম ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মের্সাস আর এম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করার আগেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ফলে নির্ধারিত দামে পৌঁছতে একটু সময় লাগছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্যের দাম সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে সমন্বয় করে নির্ধারণ করেছে। আশা করছি, পাইকারি বাজারে কিছু দিনের মধ্যে সরকারি নির্ধারিত দামে পৌঁছবে ভোজ্যতেলের বাজার।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় কমিটি ভোজ্য তেলের প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ১৩৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ৫৯০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬১০ টাকা এবং খূচরা বিক্রয় মূল্য ৬৩০ টাকা। প্রতিলিটার পাম সুপার (খোলা) মিলগেট মূল্য ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।