ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল, গাড়িতেই মৃত্যু

শয্যা খালি নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়ার পর চট্টগ্রামে জসিম উদ্দিন চৌধুরী (৬০) নামে এক ব্যক্তি গাড়িতেই মারা গেছেন। বুধবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে তাকে নগরের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হলেও ফ্লু কর্নার শয্যা খালি নেই উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রোগী মারা গেছেন।
নোয়াখালীর চাটখিলের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় গরীব উল্লাহ শাহ হাউজিং এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। জসিম উদ্দিন চৌধুরী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও একটি জাতীয় দৈনিকের চবি প্রতিনিধি জোবায়ের উদ্দিন চৌধুরীর বাবা।
জোবায়ের উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ার পর প্রথমে ন্যাশনাল হাসপাতালে যোগাযোগ করি। তারা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো চিকিৎসক এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে এক কর্মচারী আমার বাবার অক্সিজেন মেপে দেখেন। এরপর তারা জানায়, রোগীর অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু তাদের হাসপাতালে ফ্লু কর্নারে শয্যা খালি নেই। ভর্তি নিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এরপর উপায় না পেয়ে বাবাকে নিয়ে চমেক হাসপাতালের দিকে রওনা হই। কিন্তু গাড়িতেই বাবা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখে জানান, রোগী আরও আগে মারা গেছেন।
আইসিইউর অভাবে বিএনপির নেতার মৃত্যু
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) শয্যা না পেয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। বৃহস্পতিবার ভোররাতে নগরের 'ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে' মারা যান তিনি।
নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কামাল উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট ছিল। যেটি করোনার উপসর্গ। বুধবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতালসহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও কেউ ভর্তি নেয়নি। পরবর্তীতে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শয্যার অভাবে তাকে আইসিইউতে রাখা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে মারা গেছেন।
চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বাড়ছে চট্টগ্রামে
করোনা সন্দেহে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে চট্টগ্রামে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এখনো বেসরকারি হাসপাতালগুলো বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ কেউই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর খুঁটির জোর কোথায় সেটি বের করতে হবে। প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখলে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যেতো না।
ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবা তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চিকিৎসাসেবা তদারকির কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার তথ্য আমরা নিয়মিত সংগ্রহ করছি। এ ছাড়া চিকিৎসার অভাবে যেসব রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠছে সেগুলো নিচ্ছি। ঘটনাগুলো তদন্ত হচ্ছে। চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।