বিলাসবহুল ১১২ গাড়ি পেতে ৫৫১ দরপত্র
কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় বাংলাদেশে আনা ১১২ টি বিলাসবহুল গাড়ির অনলাইন নিলামে (ই- অকশন) ৫৫১ টি দরপত্র জমা পড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ৩ ও ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামে ১১২ টি গাড়ির জন্য অনলাইন এবং অফলাইনে দরপত্র জমা দেন ক্রেতারা।
এর মধ্যে ওবিপিসি-২/৫৩৩/১১ লটের বিএমডব্লিউ ৭৩০এলডি এসই অটো গাড়িটিতে সর্বোচ্চ ৫৩ লাখ টাকা দরপত্র দিয়েছে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার ফারজানা ট্রেডিং। নিলামে গাড়িটির রিজার্ভ ভ্যালু ধরা হয়েছিলো ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৬০ টাকা।
বিভিন্ন গাড়িতে ৫৩ লাখ টাকা থেকে সর্বনিম্ব ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দরপত্র জমা দিয়েছেন ক্রেতারা। রবিবার (১৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দরপত্র পর্যালোচনায় এই চিত্র পাওয়া যায়।
দীর্ঘ ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়িগুলো এর আগে চার বার নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় তখন গাড়িগুলো ছাড় করা যায়নি। এবার ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে অনলাইন এবং প্রচলিত নিয়মে পঞ্চম বারের মতো নিলামে তোলা হয় গাড়িগুলো।
এর মধ্যে ছিলো ২৬টি মিতসুবিশি, ২৫টি মার্সিডিজ বেঞ্চ, ২৫টি বিএমডবিøউ, ৭টি ল্যান্ডরোভার, ৭টি ল্যান্ডক্রুজার, ১টি সিআরভি, ৬টি লেক্সাস, ৫টি ফোর্ড, ৩টি জাগুয়ার, ১টি দাইয়ু ও ১টি হোন্ডাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১২টি বিলাসবহুল গাড়ি।
কারনেট গাড়ির নিলামের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার আল আমিন টিবিএসকে বলেন, গাড়িতে সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৫৩ লাখ টাকা। দরপত্রে উল্লেখ করা মূল্যের সাথে ১০ শতাংশ এআইটি (এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, "টেন্ডার অনুমোদনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রেরণ করা হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব বিলাসবহুল গাড়ি থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছি।"
অন্য দেশের গাড়ি সাময়িক সময় ব্যবহারের জন্য নিজ দেশে নিয়ে আসার বিশেষ সুবিধাকে বলা হয় কারনেট সুবিধা। বিদেশি বিশেষ ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিভিন্ন দেশের নাগরিক, কুটনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকরা কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় এসব গাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
নিয়ম অনুযায়ী ফেরার সময়ে সেই দেশে এসব গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। এই সুবিধার অপব্যবহারের কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কড়াকড়ির আরোপ করায় গাড়িগুলো খালাস নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, কারনেট গাড়ি নিলামে তোলার অনুমতি পেতে গত ২৪ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার। এ আবেদনের ভিত্তিতে গত ১৭ আগষ্ট অনুমতি দেয় এনবিআর। দরপত্রে গাড়িগুলোর রিজার্ভ ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১ থেকে ৩ কোটি টাকা। তবে গাড়িগুলো পুরনো এবং চাবিসহ গাড়ির কিছু আইটেম না থাকায় রিজার্ভ ভ্যালু থেকে অনেক কম দাম দেওয়া হয়েছে দরপত্রে। কিছু গাড়িতে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৬ জন ক্রেতা দরপত্রে অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত, কাস্টমস সুত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় ২০১৬ সালের আগষ্টে ৮৫ টি এবং ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩ টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিলো। এরপর ২০১৮ সালে আরো দুটি নিলামের আয়োজন করা হয়েছিলো।
এর মধ্যে একটি নিলামে ২২ টি এবং অন্য নিলামে ১১১ টি গাড়ি তোলা হয়েছিলো। সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ নভেম্বর ফের নিলামে উঠেছে বিলাসবহুল এসব গাড়ি। বিলাসবহুল গাড়িগুলো কিনতে আগ্রহী বিডাররা অনলাইন নিলামের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও মোংলায় কাস্টমস অফিসে রাখা বাক্সে দরপত্র আবেদন জমা দিয়েছিলেন। গত ২৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ও ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর গাড়িগুলো পরিদর্শনের সুযোগও রেখেছিল কাস্টম কর্তৃপক্ষ।