বিদেশ পাড়ি দেয়ার সাড়ে তিন মাসে লাশ হল রাকিবুল
বাড়ির ভিটা ও জমি বিক্রি করে মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েও ছেলেকে রক্ষা করতে না পেরে শোকে মুহ্যমান লিবিয়ায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির একজন রাকিবুল ইসলামের মা-বাবা।
বিদেশে যাওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় লাশ হতে হল এ যুবককে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটিয়াবাড়িয়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেন ও মহিরুন নেসার ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২০)। তাদের চার সন্তানের মধ্যে রাকিবুল ছোট। যশোর সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল।
পিতা ইসরাফিল জানান, তিন মাদারীপুরে স-মিলে কাজ করেন। পরিবারের অবস্থার উন্নতির জন্য বিদেশ যেতে চায় রাকিবুল। তিনি তাকে পড়ালেখা শেষ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ছেলে তার আগেই বিদেশ চলে যায়।
নিহত রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানার সাথে মুক্তিপণের টাকার জন্য যোগাযোগ করতো পাচারকারী চক্র।
তিনি জানান, টাকার দাবিতে তার সাথে যারা কথা বলেছে, তারা বাঙালি। ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল। লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়া দালালের সাথে তাদের চুক্তি হয় চার লাখ পনের হাজার টাকায়। বাংলাদেশ থেকে বাসে ভারতের কলকাতা, সেখান থেকে প্লেনে মুম্বাই, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে পৌঁছায় রাকিবুল। সেখানে সে দালালের ক্যাম্পে থাকতো। ১৭/১৮ দিন সেখানে অবস্থান করলেও দালাল তাকে ত্রিপোলি পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। তখন রাকিবুল নিজে বেনগাজীতে কাজ খুঁজে নেয়। এ অবস্থায় মে মাসে আব্দুল্লাহ নামে অপর এক দালালের সাথে পরিচিতি হয় রাকিবুলের। এ দালাল তাকে ৭০ হাজার টাকা দিলে ত্রিপোলিতে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছিল। তার সাথে আরও কয়েক জনসহ ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হয় রাকিবুল।
গত ১৭ মে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান সোহেল রানা।
তিনি আরও জানান, ১৮ মে তার মোবাইল ফোনে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলা হয়, তার ভাইকে পেতে হলে ১২ হাজার ডলার পৌঁছে দিতে হবে দুবাইতে। না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তারা লিবিয়ায় অবস্থানরত তাদের চাচাতো ভাই ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দুবাইতে পৌঁছে দিতে চাইলে রাজি হয়নি অপহরণকারীরা। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে সোহেল রানাকে ফোন দেয়া হতো এবং নির্যাতনের জখম রাকিবুলের সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হতো। রাকিবুল তাদের বলতো,'আমার জীবন ভিক্ষা দে, তোরা টাকা ম্যানেজ করে দে'।
নিহত রাকিবুলের পিতা ইসরাফিল বলেন, সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্য এক পর্যায়ে তারা বাড়ির ভিটা ও জমি বিক্রি করে টাকা দেয়া সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং মুক্তিপণ দাবিকারীদের কাছ থেকে ১ জুন পর্যন্ত সময় নেয়া হয়। টাকা পাঠানোর আগেই খবর এলো দালাল চক্র লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে রাকিবুলসহ ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে।
সোহেল রানা জানান, ২৮ মে একটি ফোন থেকে রাকিব জানায়, তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এরপর তারা জানতে পারেন রাকিবসহ ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার কথা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের আবেদন সরকার যেন রাকিবুলের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।