বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার: প্রধান বিচারপতি
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে তার আইনজীবীদের হট্টগোলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অবস্থান করা বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন– “বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার। আদালতে এ রকম (বিশৃঙ্খলা) নজির আর দেখিনি। আমরা কাগজ দেখে বিচার করব। কে কী বলল, তা দেখব না।”
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃক খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার আরও কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা বাকি আছে। এ জন্য দুই সপ্তাহ সময় চান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
এর বিরোধিতা করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, “খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার একটা প্রতিবেদন আমাদের হাতে আনঅফিশিয়ালি রয়েছে। আপনি সেটি দেখেন। মেডিকেল রিপোর্ট আসার আগেও আপনি জামিন দিতে পারেন।”
এ সময় আদালত বলেন, দুটি রিপোর্টের ওপর আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানি করব।
এ জন্য আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ওই দিনই খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি করা হবে বলে আপিল বিভাগ আদেশ দেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বৃহস্পতিবারই (৫ ডিসেম্বর) শুনানি করার দাবিতে আদালতে হট্টগোল শুরু করেন। এর প্রতিবাদ জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
একপর্যায়ে আদালতের ভেতরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতিসহ অন্য পাঁচ বিচারক এজলাসেই চুপচাপ বসা ছিলেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলতে থাকেন, “জামিন না নিয়ে আমরা এজলাস ত্যাগ করব না।”
ওই সময় তারা বিচারকক্ষে বসে পড়েন। একপর্যায়ে সকাল ১০টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় চলে যান। এর পরও আইনজীবীরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এর পর আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর নতুন দিন নির্ধারণ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ আওয়ামী লীগপন্থী অন্য আইনজীবীরা কিছুক্ষণ এজলাসকক্ষে বসা ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে তারা এজলাস ছেড়ে চলে যান।
বেলা ১১টার একটু পর আবারও এজলাসে ওঠেন বিচারপতিরা। তারা অন্য মামলার শুনানি করতে চাইলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি গ্রহণ করার দাবি জানান।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের মামলার তারিখ হয়ে গেছে, আপনারা চলে যান।”
একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ডায়াসে দাঁড়ান।
এ সময় আদালত বলেন, তাঁরা আপিল বিভাগে এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেননি।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমি শেষবারের মতো কথা বলতে চাই।”
আদালত বলেন, “আমরা আদেশ দিয়েছি। আর কোনো কথা শুনব না।”
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার আর্জি জানান।
আদালত বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৃহস্পতিবার শুনব।”
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তুমুল হইচই শুরু করেন।
হইচইয়ের মধ্যে আদালতের ক্রম অনুসারে মামলা ডাকা হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ডেসটেনির এমডি রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যা্ন মোহাম্মদ হোসেনের জামিনের শুনানির জন্য দাঁড়ান আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তখন টেবিল চাপড়ান। শুনানি করার চেষ্টা করেন আজমালুল হোসেন কিউসি।
এ সময় বিএনপিপন্থী কয়েকজন আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ছাড়া আর কোনো শুনানি হবে না।
একপর্যায়ে সরকার-সমর্থক ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিএনপিপন্থী কয়েকজন আইনজীবী স্লোগান দেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
তাঁরা ‘খালেদা জিয়া’, ‘খালেদা জিয়া’ বলেন স্লোগান দেন।
আজমালুল হোসেন কিউসি যে মামলা শুনানির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, সেটির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন রাখেন আদালত। পরে বিচারপতিরা আদালতের এজলাস ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির পর আদালত আর কোনো মামলার শুনানি নিতে পারেন নি।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এই আচরণ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা যে আচরণ করেছে তা অভাবনীয়।
তিনি বলেন, “এই আদালতে দাঁড়িয়ে তারা স্লোগান দিয়েছে। হট্টগোল করে এবং বিচার কাজে বাধা সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের বার ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবীরা কোর্টে ছিলেন, কিন্তু তারা জুনিয়রদের থামানোর কোনো চেষ্টাই করেননি।”
তিনি বলেন, “আমরা খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত কিন্তু তারা আপিলের শুনানি না করে জামিন শুনানি নিয়ে ব্যস্ত।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “খালেদা জিয়া একজন অপরাধী। তিনি অপরাধ করেছেন। তার জামিন চাওয়া হয়েছে। জামিন দেওয়া না দেওয়া আদালতের এখতিয়ার।”