বাংলাদেশেও টিকা বৈষম্য
গত জুন-জুলাইয়ে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তার ঘটলে কোভিড রোগীর চাপে ভেঙ্গে পড়েছিল সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু ডেল্টায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় এখন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পাননি তিন শতাংশ মানুষও।
এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এরই মধ্যে অমিক্রন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করলে টিকা বৈষম্যের জন্য মৃত্যুহার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যোগ্য জনসংখ্যার ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নিয়েছেন দুই ডোজই।
এর মধ্যে ঢাকা শহরে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন প্রায় দুই শতাংশ মানুষ। দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই ডোজ টিকা নিয়েছে এক শতাংশেরও কম মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ০.৯২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২.২৯ শতাংশ, খুলনায় ২.২৮ শতাংশ, সিলেটে ২.২৮ শতাংশ ও চট্টগ্রাম জেলায় ৫.৫২ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।
অমিক্রন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে টিকা বৈষম্য নিয়ে সারাবিশ্বে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার হার বেশি। শহুরে নিম্নবিত্ত ও গ্রামে টিকা নেওয়ার হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের টিকা বৈষম্য ঠিক উদ্দেশ্যপ্রণীত না, এটি পরিকল্পনাগত সমস্যা। তবে অমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুহার কমাতে টার্গেটেড ভ্যাকসিনেশনে জোর দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাংলাদেশের টিকা বৈষম্য বিতরণে বৈষম্য না, এটি হলো পরিকল্পনাগত ত্রুটি। গরীব, বয়স্ক মানুষ- যাদের টিকা নেওয়া প্রয়োজন তাদের টিকা নিতে আগ্রহী করতে উদ্যোগ না নেওয়া ও তাদের কাছে ঠিকমত টিকা না পৌঁছানোর কারণে এ বৈষম্য।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে এখন প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি টিকা দেওয়া হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন করে বর্তমানে টিকা অপেক্ষায় আছে প্রায় এক কোটি মানুষ।
দেশে করোনায় প্রাণ হারানো জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশের বয়স ৬০-এর বেশি। অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, "কোভিডে বয়স্কদের মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। এখনও প্রায় এক কোটি বয়স্ক মানুষ টিকা পায়নি। আমাদের স্টকে এখন যথেষ্ট পরিমাণ টিকা আছে এবং নিয়মিত টিকা আসছে। তাই খুব দ্রুত টার্গেটেড ভ্যাকসিনেশন করে বয়স্কদের টিকা দিতে হবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যত মানুষ টিকা পেয়েছে তার মধ্যে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত এক ডোজ পেয়েছে ৪৪% ও দুই ডোজ পেয়েছে ৪৭% মানুষ। এর মধ্যে ঢাকা শহরের টিকা নেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।
ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা: এম মুশতাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, "প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও শহরের নিম্নবিত্তদের মধ্যে টিকা নেওয়ার হার কম। দেশের ভেতর টিকা বৈষম্যের কারণেও কিন্তু নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরির শঙ্কা তৈরি হয়। দেশে অমিক্রন ভেরিয়েন্ট চলে আসলে দুই ডোজ টিকা নেওয়ারা কিন্তু কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে। তাই মৃত্যু কমাতে দ্রুত বয়স্ক ও কোমর্বিড রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে।"
দরিদ্র ও পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে দুই দফা বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকার আওতায়ে এসেছে ঢাকার ১ লাখ ৭৭ হাজার বস্তিবাসী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম টিবিএসকে জানান, টিকা নেওয়ার সুযোগ এখন অনেক সহজ। কমিউনিটি ক্লিনিকেও টিকা দেওয়া হচ্ছে। সব শ্রেণির মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় এখন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার প্রাপ্যতা সাপেক্ষে আবারও বিশেষ ক্যাম্পেইন করে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।