বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়ছে মাল্টা চাষ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আমিনুল ইসলাম আরও চারজনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গোগ্রাম ইউনিয়নের বটতলীতে ৪৫ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন।
২০১৭ সালে নরসিংদী থেকে চারা কিনে তারা ২৫ বিঘা জমিতে প্রথম মাল্টা চাষ শুরু করেন। তাদের বাগানে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার মাল্টা গাছ রয়েছে। তারা আশা করছেন, এ বছর বেশ ভালো দামে মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমরা আগে পেয়ারার চাষ করতাম। একদিন হুট করেই মাল্টা চাষের সিদ্ধান্ত নিই।'
'বাণিজ্যিকভাবে যে পেয়ারার আবাদ আমরা করতাম, সেসব গাছ তিন বছরের মতো বেঁচে থাকে। আর মাল্টা গাছ একবার লাগালে বাঁচে ২০ বছর। আবার উৎপাদন খরচ ও কীটনাশক লাগে কম', যোগ করেন তিনি।
'শুরুতে এক বিঘা জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করলে তারপর পরিচর্যা ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। তবে এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের ৪০০টি গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আবার নতুনভাবে লাগাতে হয়েছে', বললেন আমিনুল ইসলাম।
তার মতো এখন শত শত কৃষক রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে গেলেই চোখে পড়বে মাঠের পর মাঠ দেশীয় উদ্ভাবিত মাল্টার বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও দেশের এ খাতকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। বাজারে গেলে দেশীয় জাতের সবুজ রঙের মাল্টা বিক্রি হতে দেখা যায়। খুচরা কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয় এসব মাল্টা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ২০১৬ সালের দিকে প্রথম মাল্টা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে জেলায় ১৪৮ হেক্টর জমিতে এ ফলের চাষ হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ফলন হয়েছে ২২২ টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয় গোদাগাড়ীতে, ১০২ হেক্টর জমিতে। তবে প্রতি বছর মাল্টার চাষাবাদ বাড়ছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রধানত দেশীয় উদ্ভাবিত মিষ্টি জাতের বারি মাল্টা-১ চাষ হয়।
গোদাগাড়ীর পিরিজপুরের রফিকুল ইসলাম পৌনে দুই বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করছেন। গত বছর মাল্টা বিক্রি করে তার আয় হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। এ বছর ইতোমধ্যে ৪২ হাজার টাকার এ ফল বিক্রি করেছেন। জমিতে আরও মাল্টা রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, '২০১৭ সালে মাল্টা চাষ শুরুর পর গত বছর প্রথম ৫২ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। গত বছর খুব একটা মাল্টা উৎপাদন হয়নি। তবে এ বছর উৎপাদন ভালো। এখন পর্যন্ত ১৪ মণ বিক্রি করেছি। ৯০ টাকা কেজি দরে সব মাল্টা ঢাকায় পাঠিয়েছি। সব খরচ বাদে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।'
'আবাদের প্রথম বছর থেকে অল্প কিছু ধরলেও মাল্টার পুরোপুরি ফল পেতে অন্তত তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হয়', যোগ করেন তিনি।
গোগ্রামের আরেক চাষী মো. মাহাবুব জানান, তার ২০ বিঘা জমিতে পরিপক্ক মাল্টার গাছ রয়েছে ১২৩০টি। চলতি বছর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারিদের কাছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে তিনি ১৫ মণ মাল্টা বিক্রি করেছেন। আরও ১০ মণের মতো বিক্রি হবে।
রাজশাহী সিটি এলাকার নগরপাড়ায় ১৮ কাঠা জমিতে মাল্টা চাষ করছেন সাজ্জাদ হোসেন। গত বছর এই বাগান থেকে ৩০ মণ মাল্টা পেয়েছেন তিনি। এ বছর প্রত্যাশা করছেন ৪০ থেকে ৫০ মণ বিক্রি করবেন।
সাজ্জাদ জানান, মাল্টা চাষ করা লাভজনক। তবে তা যত্ন নিয়ে করতে হয়। যত্ন না নিলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা আছে থাকে, গাছ হলুদ হয়ে মারা যায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, 'মাল্টা চাষের জন্য খুব সচেতন কৃষক দরকার। কারণ মাল্টা বেশি পরিচর্যা করতে হয়। এটা খুবই সেনসিটিভ ফল। এইজন্য আমরা সচেতন কৃষকদের মাল্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করি।'
'যত্ন নিতে পারলে এ ফসল চাষাবাদ করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায়। আমরা মনে করি, যত্ন নিয়ে চাষাবাদ করতে পারলে এ ফসল বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে', যোগ করেন তিনি।