মৃত নয়, অপহৃত যুবক ফিরেছেন ভারত থেকে
বগুড়ায় সাত বছর আগে শামীম (২৬) নামে এক যুবককে 'হত্যা' করা হয়েছে বলে মামলার প্রধান আসামী ও পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য দেওয়া হলেও অভিযোগপত্র বলছে, মামলাটি অপহরণের। এই মামলায় ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বগুড়ার আদালতে অভিযোগপত্র দেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিলাদুনন্নবী।
অপহরণের এই মামলায় আজিজার রহমানকে (৩১) একমাত্র আসামী করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ মামলায় চার মাস জেলও খেটেছেন তিনি। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
তবে সাত বছর পর জানা গেল, শামীম ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে তিনি দুই বছর জেলও খেটেছেন।
এর মধ্যে পুলিশের কাছে তিনি একটি মামলার নথিও হাজির করেছেন। এই মামলার বাদী আজিজার রহমান।
সমাজে শান্তিরক্ষার জন্য বগুড়া আদালতে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলা করেন তিনি। আসামী করা হয় শামীম, তার মা ঝর্না বেগমসহ চারজনকে। এই মামলায় তাদের অব্যাহতি দেন আদালত। তবে আজিজারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা এখনো চলমান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনা বগুড়া সদরের মানিকচক এলাকার। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ বছর পর সোমবার সকালে হঠাৎ শামীমকে দেখা যায় বগুড়ার সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায়। তাকে জীবিত দেখা গেছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত গ্রামবাসী তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করেন। এই ঘটনার পর শামীম বগুড়া সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে নেয়।
শামীম সদর উপজেলার শাখারিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম শাহিন। আর আজিজার রহমান পাশবর্তী এলাকা মানিকচকের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত ধলু প্রামাণিক। আজিজার পেশায় শহরের বড়গোলা এলাকার একটি মুদির দোকানে কর্মচারী।
আজিজার রহমান গণমাধ্যমের কাছে সকাল থেকে অভিযোগ করেন, 'শামীমের কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাওনা ছিল আমার। সাত বছর আগে শামীমকে টাকা জন্য চাপ দেই। ওই সময়ই শামীম গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যান। পরে আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন শামীমের মা ঝর্ণা বেগম। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমি এ মামলায় সাড়ে চারমাস জেল খেটেছি। এখনো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছি।'
আজিজার বলেন, 'সোমবার সকালে মানিকচক এলাকায় শামীমকে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘোরফেরা করতে দেখা যায়। পরে আমার ছোটভাই তাকে আটক করে। পরবর্তীতে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ এসে শামীমকে থানায় নিয়ে যায়।'
বগুড়া সদর থানায় কথা হয় শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ওই সময় আজিজারের সাথে আমার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তারা আমাকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করেন। পরে তাদের ধাওয়া খেয়ে আমি ভারতে পালিয়ে যাই। সেখানে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আমার সাজা হয়। দুই বছর সাজা শেষে ৩ বছর আগে আমি দেশে ফিরে আসি।'
এতদিন কেন প্রক্যাশে আসেননি, এমন প্রশ্ন করলে শামীম বলেন, 'আজিজারদের ভয়ে আমি এলাকায় বাইরে যাইনি। তবে আদালতে হাজিরা দিয়েছি।'
আজিজারের বিরুদ্ধে করা মামলার তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে ২ জানুয়ারি কর্নপুর মহল্লার আজিজার রহমান তার বন্ধু শাখারিয়া গ্রামের শামীম অপহরণ করে গুম করেন। এমন অভিযোগ করে গত ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শামীমের মা ঝর্না বেগম বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলায় জেল খাটেন আজিজার।
আজিজার বলেন, 'এই ঘটনায় আমি কখনো জড়িত ছিলাম না। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলায় জড়ানো হয়েছে।'
সকালে দিকে শামীম এলাকায় আসার ঘটনা নিয়ে আলোচনার সময় বগুড়ার সদর থানার ওসি মো. সেলিম রেজা বলেন, ' শামীম বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন বলে আমাদের বলা হচ্ছে। আর হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।'
তবে এখন পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আগের মামলা (আজিজারের বিরুদ্ধে মামলা) আদালতে চলমান। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। তবে শামীমের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা থেকে আদালত থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।'