ফোন করলেই বিনামূল্যে অক্সিজেন
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে চাহিদা বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের। তাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে আবারও উদ্যোগ নিয়েছে আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশন। ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এ সেবা চালু করেছে ফাউন্ডেশনটি। ফোন করলেই ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। একইসাথে নগরীর ১৫ টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে চালু করা হয়েছে অক্সিজেন ব্যাংক। নগরীর যে কেউ এ সেবা নিতে পারবে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে প্রয়োজন হচ্ছে শুধু পরিচয়পত্র। রোগীর প্রয়োজন হলে একাধিকবার অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে পারবেন।
আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম বলেন, "করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মতো এবারও এ সেবা চালু করেছি। আমাদের ৫০০ সিলিন্ডার আছে, যেগুলো আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে রিফিল করা হয়। যে কারও প্রয়োজন হলে ফোন দিলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়ে যাবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের প্রতিনিধি দিতে পারিনি তবে ১৫টি ওর্য়াডে প্রতিনিধি আছে, এদের সাথে গাউছিয়ায় কমিটিও আমাদের হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করছে। তাদের যোগাযোগের নম্বরও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইনে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি সিলিন্ডার রিফিল করতে চান, তাদেরও বিনামূল্যে রিফিল করে দেওয়া হবে"।
"এবার আমরা নগরীর ৪১ ওর্য়াডে প্রতিনিধি দিতে পারি নি। তবে যে কোন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাদরে পাশের এলাকা থেকে অক্সিজেন নিতে পারবেন। অক্সিজেনের চাহিদা বাড়লে প্রতিনিধি আরও বাড়ানো হবে", বলেন সরওয়ার।
তবে গত বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, "অনেকে প্রয়োজন ছাড়া বাসায় সিলিন্ডার নিয়ে রাখে। আমরা তাদের বলবো নিতান্তই যদি প্রয়োজন না হয়, নেবেন না। কারণ জরুরি প্রয়োজনে পরে অন্যদের আমরা দিতে পারবো না"।
গত ১৭ এপ্রিল রাত ১টার ঘটনা। করোনা আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যায় নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নাজির বাড়ির বাসিন্দা নেয়ামুল আলম চৌধুরীর। ডাক্তার পরামর্শ দেন অক্সিজেন দিতে। ওই সময়ে তার পরিবার বুঝে উঠতে পারছিল না এত রাত্রে কোথায় অক্সিজেন পাবে। পরে নেয়ামুলের ভাইপো আবরার আলী চৌধুরী জানান, ফেইসবুকে তিনি দেখেছেন মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ দেয়।
আবরার আলী চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "চাচার অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ার সাথে সাথেই আমরা মোস্তফা হাকিম কলেজে যাই। যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই দেয়া হয়। যাওয়া মাত্রই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরি। এরপর থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চাচার অক্সিজেন প্রয়োজন ছিল। চাচা সুস্থ হয়ে উঠলে গতকাল (২১ এপ্রিল) সিলিন্ডার ফেরত দিয়ে আসি। মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন না থাকলে আমার চাচার আরো খারাপ অবস্থা হতে পারতো"।
মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ। তর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেন তার বন্ধু বিপুল চাকমা।
গতকাল বিপুল চাকমা টিবিএসকে বলেন, "এপ্রিলের শুরুর দিকে আমার বন্ধু ড. আসিফ করোনায় আক্রান্ত হয়। এরপর তার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। তখন আমি মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করি। একবার নয়, একে একে পাঁচবার সিলিন্ডার রিফিল করেছি কোন টাকা ছাড়াই। করোনার এই সময় মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন যে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়"।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামবাসীর জন্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে চীন থেকে ১,০০০ সিলিন্ডার আমদানি করে। এর মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে ৫০০ সিলিন্ডার বিমানে আনা হয়। বাকি ৫০০ সিলিন্ডার আনা হয় নদী পথে। এই সিলিন্ডারগুলো চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১টি সিলিন্ডার ব্যাংক তৈরি করে। হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজেলাগুলোতে সিলিন্ডার সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি হাসপাতালেও বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন।
এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি) এবার প্রতিটি থানায় চালু করছে অক্সিজেন ব্যাংক। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়াতে এ উদ্যোগ সিএমপির।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিএমপির প্রতিটি থানায় অক্সিজেন ব্যাংক করার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার। এখান থেকে অক্সিজেন বিনামূল্যে পাওয়া যাবে এবং থানার মাধ্যমে পুনঃ রিফিল করানো যাবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানান, "গত বুধবার নগরীর ১৬টি থানায় আপাতত তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হবে। আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যাংকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিছু জমা রয়েছে"।
তিনি বলেন, "করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। যথাসময়ে অক্সিজেনের সরবরাহ না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করছে। অনেকের হঠাৎ করে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালে যেতে প্রায় কয়েক ঘণ্টার প্রয়োজন পড়ে। সে সময় থানা থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হাসপাতালে যেতে পারবে। অক্সিজেন-সংকটে ভুগতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির জরুরি প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নগরের যেকোনো থানা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে"।