ফেরত আসা ৭৪ শতাংশ অভিবাসী খালি হাতে ফিরেছেন: জরিপ
গৃহকর্মী হিসেবে দুই বছর আগে সৌদি আরব যান কারিনা বেগম। কথা ছিল প্রতি মাসে এক হাজার রিয়াল বেতন দেয়া হবে। কিন্তু মাসের পর মাস কাজ করে গেলেও বেতনের দেখা পাননি তিনি। গত আগস্ট মাসে খালি হাতেই বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয় তাকে।
শনিবার বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসে নিজের কষ্টের কথা এভাবেই তুলে ধরেন শেরপুরের কারিনা বেগম।
তিনি বলেন, দিন নেই রাত নেই সব সময়ই কাজ করতে হতো। কাজে কোন ত্রুটি হলেই মারতো। এত কাজ করার পরও কোন বেতন দিত না মালিক।
গত আগস্টে সৌদি পুলিশের সহায়তায় বাংলাদেশ দুতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফিরে আসে কারিনা। তিনি বলেন, আর বিদেশ যাবো না। একটি টাকাও পাই নি আমি। করোনার মধ্যে খালি হাতে আমাকে আসতে হয়েছে।
শুধু কারিনা বেগম নয় এই করোনার মধ্যে ৭৪ শতাংশ অভিবাসী কোন টাকা নিয়ে আসতে পারে নি বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশনের সহযোগী সংস্থার নেটওয়ার্ক বিসিএসএমের জরিপে দেখা যায় , করোনাকালে ৬১ শতাংশ পরিবারে কোন রেমিটেন্স আসেনি, ৭৪ শতাংশ অভিবাসী কোন টাকা পয়সা নিয়ে আসতে পারেননি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের পরিচালক (কার্যক্রম) ফরিদা ইয়াসমীন।
তিনি বলেন, এপ্রিল থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২৭ হাজার অভিবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। এর অধিকাংশই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসে যে শ্রমিক আছে সে তুলনায় নিরর্যতিত শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম। তবুও আমরা চাইনা একজন শ্রমিকও নির্যাতিত হোক। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে শ্রমিকদের কখনও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
নোয়াখালির মাইজদির হাজেরা বেগম গত নভেম্বরে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন। হাজেরাকেও খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে দেশে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে যে এক হাজার রিয়াল বেতন পেতাম সেটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। ফেরার সময় মালিক আমাকে কোন টাকা দেন নি, শুধু একটা রিটার্ন টিকেট দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাজেরা বেগম বলেন, অমানবিক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করি। অসুখ হলে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয় না। এরপরও পেটের দায়ে আবার বিদেশ যাবো।
ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের পূনর্বাসন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অভিবাসী শ্রমিক ফোরামের সভাপতি আবুল হোসেন, বমসার সাধারণ সম্পাদন শেখ রুমানা, চেয়ারম্যান লিলি জাহান।
লিলি জামান বলেন, অনেক প্রবাসী আমাদের হট লাইনে ফোন দিয়ে জানান তাদের করোনা হলেও তাদের মালিক তাদের চিকিৎসা করান না।
এ্যাডভোকেট জান্নাতুন নেছা বলেন, যারা বেতন বকেয়া রেখে এসেছে তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা কাজ করি। কিন্তু দেখা যয় অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার সময় প্রতিষ্ঠানে লিখিত দিয়ে আসে তারা বেতন যা পাবার কথা সেটা তারা পেয়েছেন। এর জন্য তাদের ককেয়া বেতন আদায় করা কঠিন হয়ে যায়। যদিও শ্রমিকরা বলেছে , যদি তারা লিখত না দিয়ে আসে সব বেতন পেয়েছেন তাহলে তাদের দেশে ফিরতে দেয়া হয় না।