ফুলচাষিদের সুসময়
পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে সাজ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম অনুষঙ্গ ফুল। সময়ের পরিক্রমায় এবার একই তারিখে পড়েছে দু'টি উপলক্ষ। দিনটিও আবার শুক্রবার। তাই অন্য বছরের চেয়ে স্বাভাবিক কারণেই এবার ফুলের চাহিদা বেশি হওয়ার কথা।
সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায় যুক্তরা। তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সীদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাদের বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ‘ফুলের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জেও জমে উঠেছে ফুলের ব্যবসা।
গদখালী বাজারে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি
সারা দেশের ফুলের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ফুল বাজার। ১৯৮৩ সাল থেকে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হয়। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের ফুলচাষিদের মধ্যে ব্যাপক ব্যস্ততা লক্ষ করা গেছে।
গদখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় এবার ফুলের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি। গদখালী বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এ ছাড়া ১০০টি গ্লাডিওলাস ৪০০-১২০০ টাকা, জারবেরা ৬০০-১২০০ টাকা ও রজনীগন্ধা ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় নারানগালি গ্রামের তাহের বলেন, পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবার তিনি সাত লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার পাঁচ লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি ও গদখালি ফুল চাষি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘সারা দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৫-৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। চলতি বছর আবাদ কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা অনেক খুশি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এ বছর ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আরও ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’’
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক এমদাদ হোসেন জানান, জেলায় ৬৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের আবাদ হয়েছে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে চাহিদা মেটাতে ফুল আমদানি
গত বছরের তুলনায় এ বছর নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে ফুলের চাহিদা। অন্যান্য বছর জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামে ফুল সরবরাহ করা হলেও এ বছর জেলার চাহিদা সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে যশোর থেকে ফুল আনতে হয়েছে তাদের।
নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সাবদি এলাকার চাষি খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, তিন দিবসকে কেন্দ্র করে গত বছর এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি হলেও গত দুই দিনে প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে আরও বেশি বিক্রি হবে।
শহরের কালিরবাজার এলাকার ফুল ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, এবার জেলার চাহিদা মেটাতে তাদের অন্য জেলা থেকে ফুল আমদানি করতে হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ক্রেতাদের ভিড় ছিল অনেক। দামও ভালো পাচ্ছেন তিনি।
ঝিনাইদহে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি
আগের সব বছরের লাভকে এ বছর ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ঝিনাইদহের একাধিক ফুলচাষি। এরই মধ্যে তারা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করার কথা জানিয়েছেন।
জেলার কালীগঞ্জের শাহাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষ করেন। তিনি বলেন, প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি হলেও চলতি মাসে এরই মধ্যে তার আড়াই লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলার কলোনিপাড়া গ্রামের কামাল হোসেন দুই বছর ধরে জারবেরা ফুল চাষ করছেন। বুধবার তিনি প্রতিটি জারবেরা ১২-১৭ টাকায় বিক্রি করেছেন। এ বছর লাভের পরিমাণ অন্যান্য বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।