প্রেম করে বিয়ে, অতঃপর স্ত্রীকে হত্যা
দুই বছর প্রেমের পর অভিভাবকদের অমতে বিয়ে করেছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মুক্তি রানী বৈদ্য ও মিঠুন সমদ্দার। তখন মুক্তির বয়স ছিল ১৭ ও মিঠুনের বয়স ১৯ বছর। মুক্তি ও মিঠুনের বিয়ে ভালোভাবে নিতে পারেননি তাদের পরিবারের সদস্যরা। মিঠুন আয় রোজগার করে না। বাবার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও মাথা গোজার ঠাইও নেই তার। তাই বিয়ের পর স্ত্রী মুক্তিকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই উঠতে-বসতে হয়েছে মিঠুনকে।
আশ্রয় দিলেও মুক্তিকে পছন্দ করতেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কথায় কথায় শাশুরির মুখ ঝামটা। অকারণে বকাঝকাও শুনতে হত তাকে। তবে মুক্তি ধৈর্য ধরে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে মিঠুনও বদলে যান। তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হতে থাকে। বাবা-মায়ের ইন্ধনে মুক্তির ওপর নির্যাতন শুরু করে মিঠুন।
পরিবারের অমতে বিয়ে করায়, বাবার বাড়ি ফেরার পথও বন্ধ ছিল মুক্তির। এরমধ্যে মুক্তিকে তাড়ানোর কৌশল আঁটে তার শ্বশুর-শাশুরি। ছেলেকে দিয়ে মুক্তির কাছে যৌতুক দাবি করেন তারা। মুক্তির দিনমজুর বাবার পক্ষে যৌতুকের দাবিকৃত টাকা দেয়া ছিল অসম্ভব। অক্ষমতার কথা স্বামী মিঠুনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টো মুক্তির ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।
গত সোমবার রাতেও যৌতুকের জন্য মুক্তিকে মারধর করে মিঠুন । এসময় যৌতুক দিতে অস্বীকার করেন মুক্তি। একপর্যায়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুরি মিলে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মুক্তিকে। হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজাতে মুক্তির মৃতদেহ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখেন তারা।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মুক্তির মৃত্যুর খবর লোকমুখে জানতে পারে পুলিশ । এরপর উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের রত্নপুর গ্রামের বাড়ি থেকে মুক্তির স্বামী মিঠুন সমদ্দার, শ্বশুর খোকন সমদ্দার ও শাশুরি রীনা সমদ্দারকে আটক করে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে মেয়ে হত্যার বিষয়টি জানতে পারেন মুক্তির বাবা-মা। এদিন দুপুরে মেয়ে হত্যার ঘটনায়- বাবা সুমন বৈদ্য বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা করেন।
প্রতিবেশীরা জানান, মুক্তিকে তার শ্বশুর-শাশুরি একদম পছন্দ করতেন না। কয়েক মাস ধরে তার স্বামীও মুক্তিকে দেখতে পারতেন না। মাঝে মধ্যে ঘর থেকে মুক্তির চিৎকার শোনা যেত। প্রতিবেশীদের সঙ্গে মুক্তির কথা বলা নিষেধ ছিল। তাকে একরকম ঘরেই আটকে রাখা হতো।
নিহতের বাবা সুমন বৈদ্য জানান, আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তি বিয়ে করেছিল। একারণে তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কম ছিল। এছাড়া মুক্তির শ্বশুর-শাশুরি আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছিলেন। এসব কারণে মুক্তির ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারিনি। মুক্তিকে হত্যার পর আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারি। মিঠুন ও তার বাবা-মা মিলে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হাসেন মামলার বরাত দিয়ে জানান, দুই বছর প্রেমের সম্পর্কের পর, প্রায় ৮ মাস আগে উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের থানেশ্বরকাঠী গ্রামের সুমন বৈদ্য'র মেয়ে মুক্তি রানী বৈদ্য ও মিঠুন সমদ্দার তাদের পরিবারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেন। কয়েক মাস ধরে তাদের সংসারে কলহ চলছিল। সোমবার ভোর রাতে স্বামীর বাড়ি থেকে মুক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মুক্তির হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে মুক্তিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তির বাবা সুমন বৈদ্য এ ঘটনায় মিঠুন ও তার বাবা-মাকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে।