প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কারাগারে বাদী
জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে এসেছিলেন নাজমুল হক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। প্রতিবেশি জাকের হোসেনসহ তার পরিবারের ৭ জনের বিরুদ্ধে মারধর, হত্যাচেষ্টা, টাকা ছিনতাই ও চাঁদা দাবির নানা অভিযোগ তুলেছিলেন পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল।
কিন্তু বিচারকের কাছে ঘটনাটি মিথ্যা এবং সাজানো প্রমাণিত হওয়ায় নাজমুল হক চৌধুরীকে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (সি-ডব্লিউ) মূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ২১ নভেম্বর চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব এই আদেশ দেন।
আদালতের সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট এএইচএম শহিদুল্লাহ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নামজুল হক চৌধুরী একই এলাকার জাকের হোসেন, রনি, তাহেরা বেগম, আজিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা লোহার রড দিয়ে তার ডান হাতের কব্জিতে হাড়ভাঙ্গা মারাত্মক জখম করে। এছাড়া লোহার রড দিয়ে তাকে সারা শরীরে মারধর, শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়া তার পকেট থেকে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা এবং স্যামসাং মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
নাজমুল হক চৌধুরী অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা তার কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে, পেকুয়া থানা কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার আঘাত গুরুতর দেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ফৌজদারি দরখাস্ত ও অভিযোগকারী নাজমুল হক চৌধুরীর জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ফৌজদারি দরখাস্তের অভিযোগকারী উক্ত সি আর ৪০৯/২১ নং মামলায় ০১ নং অভিযুক্ত হিসেবে ১৯ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মূলে ধৃত হয়ে অদ্য তারিখ পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন জামিনে আছেন। অন্তবর্তীকালীন জামিনে থেকে অভিযোগকারী অত্র ফৌজদারি আনয়ন করেছেন। ফৌজদারি দরখাস্তে বর্ণিত ঘটনার সংগঠন ও দায়েরের মধ্যে ১১ দিন বিলম্ব আছে এবং তিনি ফৌজদারি দরখাস্তে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকায় উক্ত বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগকারীর শারীরিক পরীক্ষায় ডান হাতে একটি ব্যান্ডেজ দেখা যায় তবে অভিযোগ অনুযায়ী চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজের তথ্য পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তারকারী পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আব্দুল হককে তলব মতে অত্র আদালতে হাজির হয়ে উক্ত তথ্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবেই অত্র আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগকারী সি আর ৪০৯/২১ নং মামলায় ধৃত হওয়ার কারণে অন্তবর্তীকালীন জামিনে গিয়ে ১ নম্বর অভিযুক্তের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এই অভিযোগ এনেছে।
এছাড়া তিনি তার জবানবন্দিতে একবার বলেছেন ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়; এর পরক্ষণেই বলেছেন তিনি নিজেই পেকুয়া থানায় গিয়েছেন; আবার বলেছেন যে, ঘটনার পরের দিন পেকুয়া থানার একজন এসআই ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এজলাসে আদালতের সি, এস, আই এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে পেকুয়া থানার উক্ত এসআই এর সাথে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগকারী তার কাছে যাননি বা তিনি ঘটনাস্থলে যান নাই বলে জানান।
এএসআই মোঃ আব্দুল হকের বক্তব্য, পেকুয়া থানা সংশ্লিষ্ট এসআই এর বক্তব্য এবং অভিযোগকারীর বাহ্যিক শারিরীক অবস্থা পর্যালোচনায় অত্র আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগকারীর আনীত ফৌজদারি দরখাস্তে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা নেই।
আরো প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগকারী অত্র আদালতে অপরাধ সংগঠন বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ অবস্থায় আনীত ফৌজদারি দরখাস্তটি খারিজ করে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয় আদালত।
জাকের হোসেনের আইনজীবী মোঃ এমরান বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে জাকের হোসেনকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দয়ের করতে এসেছিলেন নাজমুল হক চৌধুরী। সাজানো ঘটনায় মিথ্যা মামলার বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে। তাই মিথ্যা অভিযোগকারী নাজমুল হক চৌধুরীকে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (সি ডব্লিউ) মূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
নাজমুল হক চৌধুরীর আইনজীবী এডভোকেট সাইদুর রহমানও দুই পক্ষের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ আছে বলে নিশ্চিত করেছেন।