প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক আর নেই
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার হাসান আজিজুল হক আর নেই। মৃত্যুকালে দর্শনের এই অধ্যাপকের বয়স হয়েছিল ৮২।
সোমবার রাত সোয়া ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বাসভবনে মারা গেছেন এই মহাত্মা।
রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা তার এক ফেসবুক পোস্টে প্রখ্যাত এই লেখকের প্রয়াণের কথা জানান।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই অধ্যাপনা করেন।
জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন এই সাহিত্যিক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. সাজ্জাদ বকুল জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তার লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। এরপর যোহরের নামাজের জানাজা শেষে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হবে।
হাসান আজিজুল হকের তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। দুই মেয়ে রাজশাহীর বাসাতেই থাকেন, বড় মেয়ে থাকেন ঢাকায়। তার ছেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
৫০ বছরের বেশি সময়ের সাহিত্য রচনাকালে হাসান আজিজুল হক সাহিত্যিক ভাষার অনন্য রূপ ফুটিয়ে তুলে ছোটগল্প প্রকাশ করে গেছেন।
তার গল্পের মূল আবহে উঠে এসেছে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষের নিত্যদিনের দুর্দশার প্রকৃত বাস্তবতার চিত্র। কর্মজীবী নারীর দুর্ভোগ ও বঞ্চণাও ঠাঁই পায় তার গল্পে।
বাংলা ভাগ ও তার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর নির্মম পরিণতি নিয়েও লিখেছেন এ সাহিত্যিক। লিখেছেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও তার পরবর্তী প্রভাব নিয়ে। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ।
বাংলা সাহিত্যের অসামান্য এ লেখকের প্রথম গল্পগ্রন্থ- সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭)।
এরমধ্যে নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৪) গ্রন্থে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরেছিলেন।
তিনি কথাসাহিত্যের কথকতা (১৯৮১) ও অপ্রকাশের ভার (১৯৮৮) সহ প্রবন্ধমূলক অনেক গ্রন্থও রচনা করেছেন। তার সবশেষ প্রকাশিত বই- মাটির বাড়ি যতদিন চন্দ্র সূর্য।
১৯৭০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে হাসান আজিজুল হকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে, শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসান আজিজুল হক তার সাহিত্যকর্ম ও সৃজনশীলতার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।