নিম্নবিত্তদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ কম
দেশে করোনাভাইরাস টেস্টের ক্ষেত্রে বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্তদের হার অনেক কম। টেস্টের মতো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রেও উদাসিনতা রয়েছে তাদের। এখন ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলোতে যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলোতে একেবারে হতদরিদ্র মানুষ খুব একটা চোখে পড়ে না।
হার্ড ইমিউনিটির জন্য দ্রুত সব শ্রেণির অধিকসংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন সম্পর্কে অজ্ঞতা, গরিব মানুষের করোনাভাইরাস হয় না- এমন ধারণা ও অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগের অভাবে নিম্নবিত্তদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার হার কম।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে রেজিস্ট্রেশন করে আসতে হয়। তাই যারা একটু শিক্ষিত ও সচেতন শ্রেণির মানুষ, তারাই ভ্যাকসিন নিতে আসছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, একেবারে নিম্নবিত্ত মানুষ খুব একটা আসছে না ভ্যাকসিন নিতে। তবে আমাদের এখানে হাসপাতালের স্টাফরাই বেশি ভ্যাকসিন নেয়, তারপর অন্যান্য মানুষ ভ্যাকসিন নেয়।'
'সিটি করপোরেশনের তথ্য দেখলে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ভ্যাকসিনেশনের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে,' বলে জানান তিনি।
রাজধানীতে রিকশা চালান ৭০ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিবেন কি না, জানতে চাইলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'মৃত্যু এলে এমনিই হবে! ভ্যাকসিন তো আর মৃত্যু ঠেকাতে পারে না! আমাদের করোনা হয় না; বড়লোকদের করোনা হয়! ওরাই ভ্যাকসিন নিক!'
দেশে কোন শ্রেণির মানুষ কত ভ্যাকসিন নিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য নেই। তবে সিটি করপোরেশনের মাতৃসনদ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত নিম্নবিত্তরা যায়। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়, তাতে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের মাতৃসনদের কেন্দ্রগুলোতে ভ্যাকসিন নেওয়ার হার কম।
ঢাকার চারটি মাতৃসনদ কেন্দ্রে রোববার ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ৪১৫ জন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২ হাজার ২৪ জন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্ণেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রতিদিন কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে আমরা দেখি, অশিক্ষিত বা নিম্নবিত্ত মানুষের হার একেবারেই কম। মাতৃসনদগুলোতে সাধারণত নিম্নবিত্ত মানুষেরা যায়। সেসব সেন্টারে ভ্যাকসিন নেওয়ার হার খুব কম।'
সব শ্রেণির মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে বলে মনে করেন প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং কোভিড-১৯-এর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'হতদরিদ্র মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে বোঝাতে হবে, প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন আরও সহজ করতে হবে। আমাদের দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো; তাই ঠিকমতো ভ্যাকসিনেশন করলে পরিস্থিতির দ্রত উন্নয়ন হবে। তবে যদি গরিব মানুষেরা ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থাকে, তাহলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে না। তাই সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে হবে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) অধ্যাপক মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে একটা মিথ রয়েছে, গরিব মানুষের করোনাভাইরাস হয় না; তাই ভ্যাকসিন সম্পর্কে তাদের উদাসিনতা রয়েছে। আমরা চাই এ ধরনের গুজবে কান না দিয়ে সবাই যেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়। নারী ও নিম্নবিত্তরা যেন ভ্যাকসিন নিতে এগিয়ে আসে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। ভ্যাকসিন পেতে রেজিস্ট্রেশন আরও সহজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।'
এদিকে, রোববার, দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচীর অষ্টম দিনে দেশে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৩ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৩ জন ভ্যাকসিন পেলেন।
ঢাকা সিভিল সার্জন আবু হুসেইন মো. মইনুল আহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নিম্নবিত্তদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার হার কম, সেটিই এখন আমাদের কনসার্ন ইস্যু। কোন কোন ইউনিয়নে ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধন হচ্ছে না, তা জানতে আমি আজই (রোববার) ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলোতে চিঠি ইস্যু করলাম। কাল থেকে আমরা সেগুলো মনিটর করব। তারপর আমরা ইউএনওদের বলব সেসব কেন্দ্রে নিবন্ধন চালু করতে। গরিব মানুষেরা যেন সহজেই নিবন্ধন করতে পারে, তাই অস্থায়ী নিবন্ধন ক্যাম্পও চালু করা হবে।'