নিজেদের উদ্যোগে গ্রাম লকডাউন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের আদর্শ উদাহরণ হতে পারে যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাঁদাপাড়া গ্রাম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গ্রামটিকে স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হয়েছে।
গ্রামে প্রবেশের পাঁচটি সড়কের মাথায় অস্থায়ীভাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। জরুরি প্রয়োজনে কেউ গ্রামের বাইরে গেলে এসব ব্যারিকেডের সামনে হাত না ধুয়ে, কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে পারবে না।
একইসঙ্গে গ্রামবাসীর উদ্যোগে কর্মহীন পরিবারগুলোর তালিকা করে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রোববার গ্রামের ২৯১ জন কর্মহীন পরিবারকে দশদিনের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
গ্রামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২৯১ জন কর্মহীন অসচ্ছল ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারে ১৫ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি সয়াবিন তৈল, একটি সাবান, ৫০০ গ্রাম লবন ও ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১ এপ্রিল গ্রামবাসীর এক বৈঠকে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়, ২ এপ্রিল থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রামে বাইরের কেউ আসবেনা এবং গ্রাম থেকে কেউ বাইরেও যাবে না। এই সময়ে গ্রামের কর্মহীন মানুষদের জন্য একদিনের খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করবেন গ্রামের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারগুলো।
চাঁদপাড়া চৌগাছা উপজেলার অন্যতম বৃহৎ গ্রাম। নারায়ণপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রামটিতে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস। তিন হাজারের ওপরে রয়েছে গ্রামটির ভোটার।
কর্মহীন গ্রামের তিনশ পরিবারের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে গ্রামের বাসিন্দা ও নারায়াণপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মুকুলকে সভাপতি ও চৌগাছা প্রেসক্লাবের সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলামকে সম্পাদক করে ২১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি গ্রামের কর্মহীন মানুষদের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় তদারকি করবেন।
ভাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন গ্রামের নিজাম উদ্দিন। ছেলে রাহুল, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে ঘরেই আছেন। ছেলে রাহুল চৌগাছা শহরে একটি মুদি দোকানে কাজ করতো। কয়েকদিন আগে সে কাজ ছেড়ে কখনও ইটভাটা, কখনও মজুরির কাজও করতো। সেও কর্মহীন।
পরিবারটির মোবাইলে কল দিলে প্রথমে রিসিভ করেন রাহুল। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের লোকজন আমাদের বাড়িতে চাল, ডাল, আলু, তেল, লবন, পেঁয়াজ ইত্যাদি পৌঁছে দিয়েছে। আমরা ঘরেই আছি। বাইরে যাচ্ছি না।
পরে ফোন ধরেন নিজাম উদ্দিন। খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মতো গ্রামের অন্য যারা কর্মহীন তাদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন কমিটির নেতারা। আমরা সবাই ঘরে আছি। এভাবে কদিন একটু কষ্ট করে ঘরে থেকেই সব মানুষ এই বিপদ থেকে মুক্তি পাক এই কামনা করেন তিনি।
গ্রামের ওই কমিটির সম্পাদক চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমেদুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছি তারা সবাই মিলে গ্রামের প্রায় তিনশত পরিবারের দশদিনের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী তালিকা করে রোববারের মধ্যে সবার বাড়িবাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।