নারায়ণগঞ্জে জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন নিহত হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ৪৯ জন এবং হাসপাতালে ৩ জন মারা যায়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
সজীব গ্রুপের এম এ হাসেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, " কারখানাটিতে প্রায় ৬০০-৭০০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।"
ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (অপারেশন এবং মেইন্টেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ভবনটি বড় ছিল, এতে কমপক্ষে চারটি প্রশস্ত সিঁড়ি থাকার কথা। তবে ভবনটিতে মাত্র দুটি সরু সিঁড়ি ছিল।
দোতলা থেকে আগুন লেগে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের ছয় তলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই শ্রমিকরা সিঁড়ি ব্যবহার করে বেরোতে পারেনি বলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান।
এছাড়াও, কারখানার ভেতরে বিভিন্ন পণ্য ও কাঁচামাল যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে চলাচল বিঘ্নিত হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এর ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কারখানার ভিতরে আটকা পড়েন, হতাহতের সংখ্যাও একারণে বেড়ে যায়।
লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে, সেজান জুস ফ্যাক্টরির অগ্নিদুর্ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
অগ্নিকাণ্ডে আহতদের অনেকেই ছাদে আশ্রয় নেন এবং ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। দুর্ঘটনার সময় কারখানার ভেতরে ঠিক কতজন উপস্থিত ছিল তা এখন পর্যন্ত জানা যায় নি।
দেবাশীষ বর্ধন আরও বলেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের অনেকেই জানালা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। তারা যদি সরাসরি ছাদে উঠতে পারতেন তবে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো,"
শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, "ভবনটি থেকে ৪৯ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনজন বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছে।"
ঘটনার পরপরই কারখানা ভবন থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আগুন থেকে বাঁচতে কারখানার তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেয়া আরেকজন আহত শ্রমিক রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
আহতদের মধ্যে দশজনকে তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিকেলে এবং ১৬ জনকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
মৃতদেহগুলো শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। শনাক্তের পর পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে জানান সিনিয়র সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন নবী।
সজীব গ্রুপের এম এ হাসেম বলেন, শ্রমিকদের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
'কিছু শ্রমিক হয়তো সিগারেট জ্বালিয়ে রেখেছিল, না নিভিয়েই হয়তো ফেলে রেখেছিল যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন তিনি।
কারখানার সামনে যারা বিক্ষোভ করছেন তারা শ্রমিক নয়, সকলেই বহিরাগত বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ভবনের নিচতলায় অনেক দাহ্য পদার্থ ছিল যা আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় ছিল কার্টন, ফয়েল পেপার ছিল। দ্বিতীয় তলায় বিস্কুট ছিল। তৃতীয় তলায় জুস এবং বিভিন্ন পানীয় ছিল যাতে অ্যাসিড ছিল। চতুর্থ তলায় ছিল চকোলেট। পঞ্চম তলা স্টোররুম এবং প্যাকিংয়ের জন্য ষষ্ঠ তলা ব্যবহৃত হত।
তিনি বলেন, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমার ছেলেমেয়েদের পাশে থাকতে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ফ্যাক্টরির সবগুলো ইউনিট চালু ছিলো না। লোকজন কম ছিলো। তারপরেও যারা ছিলো তারা সবাই চেষ্টা করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে, কিন্তু পারেনি।
হাসেম দাবি করেন, বিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল।
কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ সাইফুল সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভেতরে কয়েক ডজন মানুষ ছিল।
সাইফুল বলেন, "তৃতীয় তলায় উভয় পাশের সিঁড়ির দরজা বন্ধ ছিল। আমার অন্যান্য সহকর্মীদের মতে, ভেতরে ৪৮ জন আটকা ছিল। আমি জানি না তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে"।
এই মুহুর্তে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে নিয়োজিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় নি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রমিক কল্যাণফাউন্ডেশন তহবিল থেকে নিহতদের স্বজনদের সহায়তার ঘোষণাও দেন।
শুক্রবার (৯ জুলাই) এক শোক বার্তায় প্রতিমন্ত্রী শোক জানান এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিল হতে সহায়তার ঘোষণা দেন।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে দুটি পৃথক বার্তা জারি করেছেন।
(এটি একটি ডেভেলপিং স্টোরি। কিছুক্ষণ পরপর এটি আপডেট করা হচ্ছে)