নারায়ণগঞ্জে একদিনে আরও দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৪১

নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল কমছে না। উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু এবং ৪১ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় বৈশ্বিক এই মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬২৫ জন। সিভিল সার্জন অফিসের ওয়েবসাইটে শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন সিভিল সার্জন অফিস ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
তিনি বলেন, জেলায় প্রতিদিনই সংক্রামণ বাড়ছে। আমাদের কন্ট্রোল রুমে প্রতিদিনই ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করা অনেক রোগীর এসএমএস পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দুটি টিম দিয়ে এত রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে আরও ২০ জন মেডিকেল অ্যাসিস্টেট ও টেকনিশিয়ান চেয়ে আবেদন করেছি। তবে এখনো সেই লোকবল পাইনি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে দক্ষ জনবল পাঠানো হলে আশা করি প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে পারব।
নমুনা সংগ্রহকারী টিমের সমন্বয়কারী চিকিৎসক ফারহানা আক্তার জানান, আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এখন রোগীর নাকের শ্লেষা গ্রহণ করছি। আগে প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে গলার লালা ও শ্লেষা এবং রক্ত সংগ্রহ করা হতো। এখন শুধু নাকের শ্লেষা নেওয়ার কারণে সময় কম লাগছে বলে আমরা আরও বেশি রোগীর নমুনা সংগ্রহ করতে পারছি।
এদিকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার থেকে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৩০ জন করে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সামসুদ্দোহা চৌধুরী সঞ্চয়। নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যম পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
তিনি জানান, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে বর্তমানে আইসোলেশন বিভাগে ৩৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে তাদের চিকিৎসাসেবা চলছে।
খানপুর হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও আইসিইউ বিভাগ চালু করার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পিসিআর ল্যাব মেশিনে টেস্ট শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।
সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও দুটি টিম নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এম ডাব্লিউ স্কুলে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করায় করোনাভাইরাস হটস্পট হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে লকডাউন কার্যক্রম তেমন মানছে না সাধারণ মানুষ। রমজান মাসের প্রথম দিনে নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশপাশি বেড়েছে রিকশাসহ তিন চাকার যানবহনের চাপ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সাধারণ মানুষ বাজার করা, ওষুধ কেনাসহ নানা অজুহাতে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, নারায়ণগঞ্জের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিদিনই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বিকেলে ভাসমান কোনো ইফতারের দোকান বসতে দেওয়া হবে না। যেসব স্থায়ী হোটেল রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেখানে ইফতার সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে কেউ খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে না। সন্ধ্যা ছয়টার পর সব হোটেল বন্ধ করে ফেলতে হবে।