নমুনা দিতে এসে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ৬ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৩ জন। এর মধ্যে জেলা সদর এবং নবীনগর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
অবশ্য এখন নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে বেশি। বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা সদর হাসপাতালেই নমুনা দিতে আসা রোগীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নমুনা সংগ্রহকারীদেরকে। তবে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে।
সচেতন না হলে হাসপাতালে আগত অন্যরাও নমুনা দিতে আসা রোগীদের সংস্পর্শে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু বৃহৎ আকারে করোনাভাইরাসের বিস্তার ছড়িয়ে পড়ায় এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গত ৯ এপ্রিল থেকে জেলা সদর হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়।
প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের সামনে স্থাপিত বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঁচ টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পর, একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয় রোগীদের। এরপর তাদেরকে ফোন করে নমুনা সংগ্রহের দিনক্ষণ বলে দেওয়া হয়। চারজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন নমুনা সংগ্রহ বুথে।
প্রথম দিকে রোগীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও এখন চাপ বেড়েছে অনেক। প্রতিদিন ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহের টার্গেট থাকলেও, সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও বেশি। নমুনা সংগ্রহের পাঁচদিন পর দেওয়া হয় রিপোর্ট। গত ৬ জুন পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ৮৭৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তবে পজিটিভ রোগীদের চেয়ে নেগেটিভ রোগীরাই নমুনা দিতে এসে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন হাসপাতালে। জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে চলে আসছেন নমুনা দিতে।
সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই নমুনা সংগ্রহ বুথের সামনে। অনেকটা জটলা বেধেই নমুনা দেওয়ার জন্য বুথের সামনে অবস্থান করেন রোগীরা। এর ফলে বুথের সামনে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে সুস্থরাও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে আগত অন্যরাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নমুনা দিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, করোনার উপসর্গ না থাকলেও অনেকের রিপোর্ট এখন পজিটিভ আসছে। এর ফলে সবার মাঝে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। সেজন্য জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে নমুনা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু নমুনা দিতে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে জেনেও, সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরাই সামাজিক দূরত্বের বিধি মানছেন না।
জেলা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ মিঠুন কর্মকার বলেন, নমুনা দেওয়ার জন্য আমরা রোগীদের নির্দিষ্ট সময় বলে দেই- যেন তারা আগে এসে বুথের সামনে ভিড় না জমান। কিন্তু নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে নেগেটিভ ব্যক্তিরাও পজিটিভ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আমরা রোগীদেরকে প্রতিনিয়ত বলছি সামাজিক দূরত্ব মেনে নমুনা দেওয়ার জন্য। কেউ শুনছেন, আবার কেউ শুনছেন না।
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, আমরা রোগীদের প্রতিনিয়ত সচেতন হতে বলছি। নমুনা দিতে এসে রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপসর্গ না থাকলে অযথা কেউ যেন নমুনা দিতে ভিড় না জমান- সেজন্য মাইকিংও করছি। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, আমরা সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছি। সবাই যেন স্বাস্থ্য বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন সেটিও প্রচার করছি। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও মানুষকে সচেতন করছে। নমুনা সংগ্রহ বুথে দায়িত্বরত কর্মীদের নিজেদের নিরাপদ থাকার পাশাপাশি রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নমুনা দেন সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে।